এবার মন্দির ভেঙ্গে দিলো বালুর ট্রাক, ক্ষুব্ধ হিন্দু সম্প্রদায় 

Spread the love

প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল  : টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বালুবাহী ট্রাকের ধাক্কায় উপজেলার পৌলী ঘোষপাড়ার ২০০ বছরের পুরণো কালিমন্দিরটি ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। গত ২০ মার্চ রাত আনুমানিক বারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পৌলী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু চুরি করে  রাতের আধাঁরে শতশত ট্রাক ট্রাক দিয়ে বহন করে একটি প্রভাবশালী  চক্র। কালিহাতী উপজেলা সীমানার পৌলী বটতলা বালু ঘাটটি পরিচালনা করেন স্থানীয় কাউন্সিলর, পৌলী গ্রামের বাসিন্দা  সুকুমার ঘোষ ও টাঙ্গাইল সদর সীমানার ঘাটটি পরিচালনা করেন রাজাবাড়ির উজ্জলসহ সদরের প্রভাবশালীরা।এই দুই ঘাটের শত শত ট্রাক বালি  এইএক রাস্তা দিয়েই চলাচল করায় রাস্তাটি বিনষ্ট হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে পৌলী বাসস্টপ থেকে স্বরুপপুর পর্যন্ত এই নতুন রাস্তাটি নির্মান করেন এলেঙ্গা পৌরসভা।গত কয়েকদিন আগে এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নুর এ আলম সিদ্দিকী মাইকিং করেছেন এবং বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছেন বালু পরিবহনে এই রাস্তা ব্যবহার না করার জন্য। এমনকি তিনি বালুচোরদেরকেও  চিঠি দিয়ে এ রাস্তা ব্যবহারের জন্য নিষেধ করেছেন। “কিন্তু চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী।” বালুচোরেরা রাতের আঁধারে বালু চুরি করেই যাচ্ছেন। রাস্তা দিয়ে সারারাত ট্রাক চলাচল করায় হর্নের শব্দে গ্রামবাসী ঘুমাতে পারছেননা। নতুন রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। বালুবাহী রোগব্যধীতে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারন মানুষ।

কিন্তু নিরিহ মানুষ প্রভাবশালীদের কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় এবং সংবাদকর্মীরা প্রশাসনকে জানানোর কারনে ঘনঘন অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু অভিযানের পূর্বে তারা খবর পেয়ে যান। অভিযান শেষ হবার কিছুক্ষণ পরেই আবার তারা বালি চুরি শুরু করে। এভাবে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলছে বালু চুরির মহোৎসব। বালুবাহী ট্রাকগুলো বেপরোয়া চলাচল করায় রাস্তাঘাটের মানুষজন থাকেন তটস্থ। অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। 

গত ২০ মার্চ রাত সাড়ে বারটার দিকে একটি বেপরোয়া বালুবাহী ট্রাক পৌলী ঘোষপাড়ার কালিমন্দিরে ডুকে মন্দিরটি ভেঙে চুরমার করে দেয়। মন্দির ভাঙ্গার সংবাদ ঘোষপাড়ার সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে শতশত মানুষ মন্দিরে কাছে চলে যায়। পাড়ার হিন্দু সম্প্রদায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।সাধারণ মানুষের বাঁধার মুখে বালুরট্রাক বন্ধ করতে বাধ্য হয় তারা। পরদিন সকালে এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নুর এ আলম সিদ্দিকী ভেঙ্গে ফেলা কালি মন্দিরটি পরিদর্শনে আসলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন একত্রিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং মন্দির ভাঙ্গার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। গ্রামবাসী অবিলম্বে অবৈধ বালু চোরদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি করেন। 

এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন  নেক্সটনিউজকে জানান,” মন্দির ভাঙ্গার ঘটনা জেনেছি।বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি। অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।মন্দির কমিটিকে একটি অভিযোগ দিতে বলেছি।অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

টাঙ্গাইল জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে নেক্সট নিউজকে জানান, ” মন্দির ভাঙ্গার ঘটনার তীব্র্র নিন্দা জানাচ্ছি। দোষীদের শাস্তি দাবী করছি। “

টাঙ্গাইল জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুন ঝন্টু  সাংবাদিকদের বলেন,  “বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবো। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য  পুলিশ প্রশাসনের নিকট দাবী জানাচ্ছি।”

পৌলী ঘোষপাড়া কালি মন্দির কমিটির সভাপতি অনন্ত সুত্রধর নেক্সটনিউজকে জানান, ” একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধ বালু ব্যবসা করছে। বালুবাহী ট্রাক আমাদের রাস্তাটি ধ্বংস করে দিচ্ছে। আবার আমাদের ২০০ বছরের পুরনো মন্দিরটি ভেঙে দিলো। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় হিন্দু কম্যুনিটি, ডিসি ও এসপি স্যারকে জানানো হয়েছে। “

মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার জানান,    “রাত ১২ টার দিকে বালুবাহী ট্রাক প্রায় ২০০ বছরের পুরনো কালি মন্দির ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। আমরা নিরীহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বালুচোরেরা প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস আমাদের নেই। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করছি। “

গ্রামবাসী জানিয়েছেন, স্থানীয় কাউন্সিলর সুকুমার ঘোষ জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরও অবৈধ বালু ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে  পৌরসভার রাস্তা বিনষ্ট করছেন। তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন গ্রামের সাধারন মানুষ।