নাজিবুল বাশার ঃ টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের গোলাম মোহাম্মদের বসবাস। গ্রামে বসেই তাঁর গবেষণার কাজ করতেন। পাঁচ পোটল ডিগ্রি কলেজ, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইলের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার পাশাপাশি প্রবল আগ্রহে গবেষণার কার্যক্রম চালিয়ে যান । তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল “বাল্য’ বিবাহ : লিঙ্গীয় অবস্থানের স্বরূপ অন্বেষণ ” তিনি ১৫০জনকে নিয়ে এ গবেষনা করেন। গবেষক গোলাম মোহাম্মদ ধনবাড়ী উপজেলার ৪ নং পাইস্কা ইউনিয়নের, কয়রা গ্রামের কৃতিসন্তান পিতা হাফেজ আব্দুল্লাহ, তার এক ছেলে এক মেয়ে । তাঁর এ গবেষনায় তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, উপাচার্য জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার ঢাকা, তাঁর অধীনেই তিনি পিএইচডি সমাপ্ত করেন।
বোর্ডের মূল্যায়নের দায়িত্বে ছিলেন ড.অধ্যাপক খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন, উপ-উপাচার্য, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিউপি) মীরপুর সেনানিবাস , ঢাকা ও অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। ডক্টর গোলাম মোহাম্মদ নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হতে “বাংলাদেশের গ্রামসমাজে বাল্যবিবাহ: লিঙ্গীয় অবস্থানের স্বরূপ অন্বেষণ” শিরোনামে পিএইচ. ডি. ডিগ্রির অভিসন্দর্ভ রচনা করেন যা পুরোটাই গ্রাম কেন্দ্রীক ১৫০জনকে নিয়ে এ গবেষনা করেন। গবেষণায় প্রতিপাদ্য হয়, বাংলাদেশের পুরুষ প্রধান সমাজের সংস্কৃতিতে প্রজনন সক্ষমতা সামাজিক পরিচিতি নির্ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়: কিশোর বাড়ির কর্তা, কিশোরীকে অন্য বাড়ির বধূ হবার জন্য গৃহীপনায় প্রশিক্ষিত করা হয়। প্রজনন অক্ষম হিজড়াকে বিচ্ছিন্ন করা হয় পরিবার সমাজ থেকে।
এই সমাজে পুত্র অথবা কন্যা উভয় জন্য দায়বদ্ধ থাকেন বাবা, কিন্তু বাবার জন্য দায়বদ্ধ থাকেন প্রতিটি স্বস্ত্রীক পুত্র সন্তান। প্রকারান্তরে নারী বাবার বাড়ির বাইরে কোন পুরুষের আশ্রয় ও সুরক্ষা গৃহস্থালির অন্যতম অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। অপরদিকে নিজের জন্য জন্মগত সুন্দর মা খুঁজতে গিয়ে বরপক্ষও ক্রমশ নিম্ন বয়সের দিকে তাকাতে থাকে। কিশোরী বধূ এক জন মাএকজন শাশুড়ি হবার জন্য একটি ক্রান্তিকাল অপেক্ষা করে মাত্র। সন্তানের রক্তে বধূটি এমন ভাবে স্বামীর স্বাথে মিশে যায় যে তাদের আলাদা ভাবে মাপন বা অধস্থনতা নিরূপণ করা দূরূহ হয়ে পড়ে। ফলে বাড়ির নতুন বৌ (বাল্যবয়স্ক বা পূর্ণবয়স্ক) পুরাতন বৌ তথা শাশুড়ির স্থান দখল করেন এবং শাশুড়ি থেকে দাদি শাশুড়ি পর্যন্ত গড়ায়।
একজন নারীর চলন্ত বিবাহ অর্থাৎ পিতৃবাস বিবাহ বিধিতে শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে আর বর বিবাহ করে বাবার বাড়িতেই থাকবে। বধূটি কালের পরিক্রমার শ্বশুরের বংশকে গর্ভে ধারণ করে শ্বশুর বাড়ির অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে। এরপর যখন তার পুত্রটিকে বিবাহ করাবে, তখন নিজে শাশুড়ি হয়ে নিজের তথা শ্বশুর বাড়ির স্বার্থের কথাই ভাবতে হবে। ফলে পরো ঘটনাটি একজন নারীর পুরুষের প্রতিনিধী হবার কাহিনী হয়ে দাঁড়ায়। কোন বধূ স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যায় না, এমনকি মরনের পরও। বধূ এমনকি বাল্য বধূর স্বাধীনতা ততখনই, যতক্ষণ বৈধব্যে উপনীত হয়ে উর্বাসার সম্মুখীন না হয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর বঙিয় নারীবাদী মূল্যবোধ, সন্তানের বৈধতা নির্ধারণী উত্তরাধিকার নীতির ফলে বিবাহ এবং বাল্যবিবাহ লিঙ্গীয় অবস্থানে নারী ও পুরুষ তুলাদন্ডে সমআকারে প্রকাশ করে।
ডক্টর গোলাম মোহাম্মদ পাঁচ পোটল ডিগ্রি কলেজ, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইলের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। সদ্য ৩১ অক্টোবর-২০২২ খ্রি. তিনি অবসর গ্রহণ করেন।