ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:
ইউক্রেন-রাশিয়ার য্ুেদ্ধর ফলে প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বে, চলতি বছরকে বৈশ্বিক মন্দা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। খাদ্যের প্রভাব না পড়তে জমি অনাবদি না রাখতে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। এ মহামারীকে গুরুত্ব না দিয়ে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার আবাদী কৃষি জমিকে অনাবাদি করতে মরিয়া এক শ্রেণির মাটি খেকু। শতশত একর জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে অনাবাদি করে মাটি পাচারে মেতে ওঠেছে তাঁরা। গভীর করে মাটি কেটে নেয়ায় ওইসব জমিতে আগের মত ফসল ফলছে না।
সচেতন মহল জানান, উপজেলাতে প্রায় দুই ডজনের মত অবৈধভাবে গড়ে তুলা হয়েছে ইটভাটা। ইট তৈরীতে কৃষি জমির উর্বর মাটি ভালো হয়। তাই ইটভাটা মালিক ও দালাল চক্রের সমন্বয়ে কৃষকদের ফাঁদে ফেলে এ উর্বর মাটি অল্প দামে কিনে নিচ্ছে। যদি আবাদী কৃষি জমি থেকে ভাটায় মাটি নেয়া বন্ধ না হয় অনাবদি হয়ে যাবে কৃষিখ্যাত এ উপজেলা।
কথা হয় যদুনাথুপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের মাটি খেকু হানিফ আকন্দের সাথে। তিনি বলেন, ‘কৃষকদের নিকট থেকে তিন হাজার টাকায় ১ হাজার ঘনফুট মাটি কিনে ১২ হাজার টাকা যমুনা ইট ভাটায় বিক্রি করছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবু ও জালালসহ অনেকেই এ ব্যবসায় জড়িত। আমাদের চারটি পয়েন্টে মাটি কাটা চলছে। মাটি সরবরাহে কোনো সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে এ মাটি খেকু নেতাকর্মিদের নাম উল্লেখ করে বলেন, তাঁরা এ ব্যবসায় জড়িত, মাটি কাটতে কোনো সমস্যা হয় না।’
মাটির ব্যবসা একটি প্রতারণা ব্যবসা বলে উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক কয়েক দালাল। তাঁরা বলেন, ‘প্রথমে এক কৃষককে ফাঁদে ফেলে তাঁর জমি থেকে মাটি কেনা হয়। ওই জমি নিচু হয়ে গেলে তখন পাশের জমির কৃষকও বাঁধ্য হয়ে তাঁর জমির মাটি বিক্রি করে, এভাবে শুরু মাটি কেনার কাজ।’
সরেজমিনে গতকাল গেছে, উখারিয়াবাড়ি-মমিনপুর, ইসলামপুর দক্ষিণপাড়া, খাসপাড়া, সিংগাআটা বিল, দোবলা বিল, কাকনিআটা, চুইয়াবাড়ি এলাকাসহ উপজেলার প্রায় এলাকায় খনন যন্ত্র (ভেকু) দিয়ে দুই থেকে তিন ফুঁট গভীর করে কৃষি জমির উপরের অংশ কাটা হচ্ছে। জমির মাঝখান দিয়ে গাড়ী চলাচলে করা হয়েছে রাস্তা। মাটি বহণ করছে ছয় চাকার ভারি যান ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক। রাতে ড্রাম ট্রাকযোগে মাটি বিভিন্ন উপজেলাতেও প্রচার করে দিচ্ছে এ চক্র। ট্রাক্টর প্রতি মাটি বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকার উপরে এবং ড্রাম ট্রাকের মাটি প্রায় ১০ হাজার টাকায়। বসতবাড়ি ও ভবন নির্মাণে জায়গা ভরাট করতে এসব মাটি ব্যবহার হচ্ছে।
কৃষি জমির উর্বর মাটি ‘টপ সয়েল’ বিক্রি বন্ধে কৃষকদের সচেতন করছেন বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কৃষি জমির প্রাণ শক্তি জমির উর্বর মাটি, যার ওপরের অংশে জৈব সার। এ জৈব সার বিক্রি করে দিলে ওই জমিতে আগের মত ফসল ফলে না। সার প্রয়োগ করলেও কাজে আসে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৃষিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় দুই ফসলী জমিতে এখন তিন ফসল আবাদ করছে কৃষকরা। মাটি বিক্রির ফলে ওইসব জমিতে এক ফসল আবাদ করতে পারে তাঁরা। এ উপজেলাটি মূলতঃ কৃষি প্রধান অঞ্চল।’
কৃষি জমির মাটি বিক্রি বন্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসলাম হোসাইন বলেন, ‘ বিষয়টি নজরে রয়েছে। দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’