অন্তু দাস হৃদয় :
পবিত্র ঈদুল আজহায় এবার টাঙ্গাইলে চাহিদার চেয়ে প্রায় ৪১ হাজার পশু বেশি প্রস্তুত রয়েছে। সোমবার (১৯ জুন) জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর টাঙ্গাইলে কোরবানি যোগ্য গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭১৫টি। এর মধ্যে, ৭১ হাজার ৫৬০টি গরু ও ১ লাখ ২০ হাজার ১৫৫টি ছাগল। জেলায় কোরবানির চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার গবাদি পশুর। উদ্বৃত্ত আছে ৪১ হাজার ৭১৫টি।
এ দিকে, ঈদকে সামনে রেখে গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। তারা জানান, গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম তুলনামূলক বেশি হতে পারে। অপরদিকে, ক্রেতারা অনলাইন ও স্থানীয় বাজারে কোরবানির পশুর দাম যাচাই-বাছাই করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইলের চারটি ষাঁড় (বস, মানিক, সাদা বাহার ও বাহাদুর) নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে বেশি আলোচনা হচ্ছে। এ সব ষাঁড়ের ওজন ২৫-৫২ মণের মধ্যে। দাম চাওয়া হচ্ছে ১০-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
দেলদুয়ার উপজেলার ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের কলেজছাত্রী হামিদা ছয় বছর ধরে অস্ট্রিলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় লালন-পালন করছেন। ষাঁড়টির নাম দেওয়া হয়েছে মানিক। ওজন ৫২ মণ, দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা।
সদর উপজেলার ছিলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুজায়েত হোসেন কোরবানি উপলক্ষে সাদা বাহার নামের দুটি ষাঁড় গরু প্রস্তুত করেছেন। ২৯ মণ ও ৩১ মণ ওজনের ষাঁড় দুটির দাম চাচ্ছেন ১৭ ও ২০ লাখ টাকা।
সদর উপজেলার খারজানা গ্রামের খামারি সোনা মিয়া বলেন, ‘আমিসহ আমাদের এলাকার প্রান্তিক চাষিরা একটা কোরবানির ঈদের পর থেকে আরেকটা কোরবানির ঈদ পর্যন্ত গবাদি পশুগুলো পরম মমতায় লালন-পালন করে বিক্রয়যোগ্য করে তুলি। এ সব পশুদের অনেকটা সন্তানের মতো লালন-পালন করি।
সন্তান যেমন দূরে চলে গেলে কষ্ট হয়, তেমনি পালিত পশু বিক্রি করতে আমাদেরও খারাপ লাগে। তারপরেও সংসারের সচ্ছলতার জন্য বিক্রি করতে হয়। এবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৩টি ষাঁড় ও ২টি ছাগল প্রস্তুত করেছি।’
কলেজছাত্রী হামিদা বলেন, ‘ইতিপূর্বে আমি রতন ও টাইগার নামের দুটি বড় আকৃতির ষাঁড় বিক্রি করেছি। মানিক নামের ষাঁড়টির ন্যায্য দাম পেলে এ বছর বিক্রি করবো।
ছিলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুজায়েত হোসেন, ‘গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে গবাদিপশু পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে নিজেদের লালন-পালন করা পশু দিয়ে টাঙ্গাইল জেলার চাহিদা মেটানো হচ্ছে। অতিরিক্ত পশু দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে গবাদি পশু মোটাতাজা করার জন্য খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পশু মোটাতাজা করার জন্য প্রত্যেক খামারিকে ঘাস চাষের জন্য বিশেষভাবে বলা হয়েছে।
প্রাণীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ঔষধ ব্যবহার না করার জন্য খামারিদের সচেতন করা হয়েছে। কোরবানির পশুর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য জেলার প্রতিটি হাটে পশু চিকিৎসক নিয়োগ থাকবে।