ভূঞাপুর শহীদ জিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের দূর্নীতি; অবৈধ নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্য

Spread the love

যুগধারা রিপোর্ট : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অবৈধ আট নিয়োগে কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, ভূঞাপুরের সাবেক পৌর মেয়র মাসুদুল হক মাসুদের হাত ধরে দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাদাত বিপুল এই দূর্নীতি করেছেন বলে জানা গেছে।জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের বিধান থাকলেও সে নিয়ম ভেঙে আওয়ামীলীগ নেতা মাসুদের আস্থাভাজন ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বিপুলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও তালিকা থেকে জানা যায়, উক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাদাত বিপুলের নাম তালিকার আট নম্বরে। সিনিয়র সাতজনকে ডিঙ্গিয়ে তাকে নিয়োগ দায়িত্ব দেয়া হয়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৯ মে তারিখে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান অবসর গ্রহণ করেন। অবসর নেয়ার পর তৎকালীন আওয়ামী সরকারের আস্থাভাজন আবু সাদাত বিপুল ২০১৯ সালের ১ জুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি বিএনপি সমর্থিত শিক্ষক-কর্মচারীদের তোপের মুখে পড়েন। কিন্তু উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও তৎকালীন পৌর মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ কলেজে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এর পর থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। প্রতিষ্ঠানের অর্থ তছরুপ ও অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে উঠেন তিনি।
মো: আল আমিন সাবেক পৌর মেয়র মাসুদুল হক মাসুদের গাড়ি চালক আওয়ামীলীগের ক্যাডার আ: আলিমের শ্যালক। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে, অবৈধ প্রক্রিয়ায় আ’লীগ নেতা মাসুদের প্রভাব খাটিয়ে ও মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাদাত বিপুল তাকে নিয়োগ প্রদান করেন। এ পদে তিনি প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
ল্যাব সহকারী হিসেবে সুমি আক্তার,নেহার সুলতানা মিম,মো: কামরুজ্জামানকে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ প্রদান করেন তিনি।কলেজে কোন বিজ্ঞান ল্যাব না থাকলেও তিনি ল্যাব সহকারী নিয়োগ দিয়েছেন এ তিনজনকে। এছাড়াও উক্ত প্রতিষ্ঠানে আরও দুইজন ল্যাব সহকারী কর্মরত রয়েছেন।তিনজন ল্যাব সহকারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তিনি প্রায় অর্ধকোটি টাকা আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করছেন। ল্যাব সহকারী নিয়োগের নামে অবৈধভাবেএই বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করলেও তিনি ল্যাব স্থাপনে কানাকড়িও ব্যয় করেননি। ল্যাবের নামে নামকাওয়াস্তে একটি শ্রেণী কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও সেখানে কোন যন্ত্র পাতি নেই। প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন ধূমপায়ী উক্ত কক্ষে আরাম -আয়েশে ধূমপান করেন।

রফিকুল ইসলাম ২০১৬ সালে উক্ত প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সে পর্যায়ে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।২০২১ সালে ৩য় পদে নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হলে তাকে সাবেক অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের স্বাক্ষর টেম্পারিং করে ডিগ্রিতে অবৈধভাবে নিয়োগ দেন আবু সাদাত বিপুল।

অর্থনীতি বিষয়ে মো: আরজু মিয়াকে ,সমাজকর্ম বিষয়ে মাসুদা আক্তারকে অনার্স পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সাবেক অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের স্বাক্ষর টেম্পারিং ও জাল করে ব্যাকডেটে অবৈধভাবে তাদের তিনজনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এই তিনজনের নিকট থেকে বিপুল প্রায় ৪৫ লাখ টাকার আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। একই কায়দায় তিনি ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা পদে আকলিমাকে নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।তার বেতন করার জন্য বিপুল চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। আকলিমার নিকট থেকে তিনি প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা অবৈধভাবে গ্রহণ করেছেন।
সরকারি বিধি মোতাবেক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিচিং পোস্টে নিয়োগের সুপারিশ করেন সরকারি প্রতিষ্ঠান ঘঞজঈঅ . প্রতিষ্ঠান প্রধান শুধু শিক্ষকদের চাহিদা প্রদান করবেন মাত্র। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিপুল ব্যাকডেটে সাবেক অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে ও অনার্স বিষয় খোলার অনুমতির জন্য লেখা রেজুলেশন টেম্পারিং করে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবৈধ নিয়োগ প্রদান করেছেন। এই অবৈধ, বেআইনি ও বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ প্রদান করে তিনি প্রায় কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন।
এ ব্যাপারে আকলিমার কাছে মুঠোফোনে তার অবৈধ নিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে তার পরিচয় স্বীকার করেন।পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ফোন কেটে দেন।
অবেধভাবে নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক মো: রফিকুল ইসলামকে ফোন করলে তিনি বলেন , ২০২২ সালে তার বেতন হয়েছে। টিচিং পোস্টে কমিটির নিয়োগ দেওয়ার বিধান আছে কিনা -এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে শহীদ জিয়া মহিলা কলেজের এডহক কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ডা: ফরিদ উজ্জামান খান বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে কলেজ গভর্নিং বডির প্রভাবশালী সদস্য ডা: ফরিদ উজ্জামান খান আট পদে নিয়োগে অর্থ লেনদেন ও অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, সাবেক মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর প্রতিষ্ঠিত কলেজে বিএনপির আমলে কোন দূর্নীতি হয়নি। আসাদুজ্জামান খান ও মেয়র মাসুদের সময় এই নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে।
নিয়োগ বাণিজ্যের অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে তিনি বলেন, আসাদুজ্জামান খান সাহেব মারা গেছেন ও মাসুদ সাহেব পলাতক রয়েছেন।
অধ্যক্ষের মাধ্যমে এই ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে -এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন ,” আসলে অধ্যক্ষ মহোদয়ের বিষয়ে আমরা তদন্ত করে দেখবো। তবে বিপুল কে সরিয়ে আমরা একজন দক্ষ পূর্নাঙ্গ অধ্যক্ষ নিয়োগ দেবো। এ ব্যাপারে সভাপতি মহোদয় কিছু জানেন না।তবে আমাদের সময় কোন দূর্নীতি হবে না।”

নিয়োগ বাণিজ্যে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাদাত বিপুল বলেন, নিয়োগ বাণিজ্য ও বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে শহীদ জিয়া মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাদাত বিপুল যুগধারাকে বলেন, আমি কোনো দূর্নীতি করি নাই।
টিচিং পোস্টে বর্তমান বিধি মোতাবেক কমিটি কর্তৃক নিয়োগ দেয়ার সুযোগ আছে কি না – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো ২০১৬ সালের নিয়োগ দেওয়া।
পূর্বের রেজুলেশন টেম্পারিং করে ও সাবেক অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জাল করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান।
আওয়ামীলীগের আমলে আপনি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ফাঁসির দাবিতে মিছিল ও সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন কিনা -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।