রিজেনারেটিভ মেডিসিনঃ চিকিৎসা ক্ষেত্রে নয়া দিগন্ত 

Spread the love

নজরুল ইসলাম চান

তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে পৃথিবী যতটা উন্নত হয়েছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি উন্নত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সে তুলনাই হয়নি। এখনো এন্ডোস্কোপির মত পরীক্ষা পেটে নল ডুকিয়ে করতে হয়। হার্টের ব্লক নির্ণয়ের জন্য রোগীর হাত-পা বেঁধে  ক্যামেরাযুক্ত তার শরীরে  ঢুকানো হয়।  রোগ নির্ণয়ের জন্য হন্যে হয়ে বিভিন্ন টেস্ট করতে হয়। ভুল চিকিৎসায় অকালে মৃত্যুবরণ করে লাখো মানুষ। তারপরও চিকিৎসা  বিজ্ঞান থেমে নেই। কিছু নিবেদিত প্রাণ মানুষ অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছে। এরকম একটি অত্যাধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান হচ্ছে  রিজেনারেটিভ মেডিসিন। 

 যার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত, রোগাক্রান্ত, বা হারিয়ে যাওয়া টিস্যু ও অঙ্গ পুনর্গঠনের ওপর কাজ করে। এটি শরীরের নিজস্ব পুনর্গঠন ক্ষমতা ব্যবহার করে বা বিশেষ পদ্ধতিতে নতুন টিস্যু তৈরি করে রোগীদের সুস্থ করতে সাহায্য করে।

Regenerative medicine-এর মূল উদ্দেশ্য হলো শরীরের স্বাভাবিক পুনর্জন্ম প্রক্রিয়া বাড়ানো, অথবা বাইরে থেকে নতুন টিস্যু বা অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা। এটি প্রধানত তিনটি পদ্ধতিতে কাজ করে:

১. কোষ-ভিত্তিক থেরাপি (Cell Therapy):

স্টেম সেল ব্যবহার করে নতুন টিস্যু তৈরি করা।

উদাহরণ: হৃদপিণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনর্গঠন করা।

২. টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং (Tissue Engineering):

জৈবিক পদার্থ (scaffold) তৈরি করে তাতে কোষ বসিয়ে অঙ্গ বা টিস্যু গঠন।

উদাহরণ: কৃত্রিম চামড়া বা কিডনি তৈরি।

৩. জিন থেরাপি (Gene Therapy):

কোষের জিন পরিবর্তন করে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামত।উদাহরণ: জিনের মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ কোষে সঠিক কাজ চালু করা।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে Regenerative Medicine-এর ব্যবহার

১। হাড় ও অস্থি মেরামত:ভাঙা হাড় বা কার্টিলেজ পুনর্গঠনে ব্যবহৃত।

২। হৃদরোগ: হার্ট টিস্যু পুনর্গঠন করে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হার্ট কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনা।

৩। স্নায়ুতন্ত্র:স্নায়ু ক্ষতি (যেমন প্যারালাইসিস বা স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি) সারাতে সাহায্য।

৪। অঙ্গ প্রতিস্থাপন: কৃত্রিম অঙ্গ বা টিস্যু তৈরি করে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব।

৫। ডায়াবেটিস:স্টেম সেলের মাধ্যমে ইনসুলিন উৎপাদক কোষ পুনর্গঠন।

৬। চোখের চিকিৎসা:কর্নিয়া পুনর্গঠনের মাধ্যমে দৃষ্টি ফেরানো।

উদাহরণ ও সফলতাঃ

স্টেম সেল থেরাপি: ক্ষতিগ্রস্ত অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন।

টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং: পোড়া রোগীর জন্য কৃত্রিম চামড়া তৈরি।

জিন থেরাপি: হেমোফিলিয়া বা থ্যালাসেমিয়ার মতো জিনগত রোগ নিরাময়।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনাঃ

Regenerative medicine বর্তমানে গবেষণার আওতায় রয়েছে, তবে এটি ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। এটি অঙ্গ-প্রতিস্থাপনের জন্য দাতার ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে এবং অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা সম্ভব করবে।