অন্তু দাস হৃদয় :
ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মো. সাদ্দাম হোসেন (২৮) নামের এক মুঠোফোন ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি, বন্ধুরা মিলে সাদ্দামকে হত্যা করে মহাসড়কের পাশে লাশ ফেলে যায়। এমনকি হত্যার পর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বন্ধুরা।
মারা যাওয়া সাদ্দাম হোসেন টাঙ্গাইল সদরের সাদুল্লাপুর গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গাতে তার মুঠোফোনের দোকান ছিল। গত রোববার (২ জুলাই) রাতে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
সাদ্দামের পারিবারের দাবি, গত রোববার সকালে সাদ্দাম দোকানে যান। ওই দিন বিকেলে রাব্বি, অমিত, লিসান, বাপ্পীসহ ছয় বন্ধুর সঙ্গে তিন মোটরসাইকেলে ঈদ পরবর্তী ঘুরতে বগুড়ার দিকে বের হন। রাতে পরিবারের সদস্যরা খবর পান সাদ্দাম অসুস্থ। তার কিছুক্ষণ পর খবর পান সড়ক দুর্ঘটনায় সাদ্দাম মারা গেছেন।
সাদ্দামের স্ত্রী রুপা বেগম বলেন, আমি সাদ্দামকে ফোন করেছিলাম। সেসময় সাদ্দাম জানান রাব্বি ও লিসানরা আমাকে মেরে ফেলছে। তুমি আমাকে বাঁচাও। তারপর ওরা ফোন নিয়ে যায়। এরপর বারবার ফোন দেওয়ার পরও সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আমার স্বামীকে ওরা হত্যা করেছে। ঘটনার পর রাব্বি, বাপ্পী কেউ যোগাযোগ করেনি। ওদের ফোন নম্বর বন্ধ। আমাকে যারা বিধবা করেছে ও আমার ছেলেকে যারা এতিম করেছে তাদের ফাঁসি চাই।
সাদ্দামের মা জোৎন্সা বেগম বলেন, লিসান, রাব্বি ছেলের দোকানে ও আমার বাড়িতেও প্রতিনিয়ত আসতো। ওরাই আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। এক্সিডেন্ট হলে শরীরে পোশাক থাকতো। কিন্তু সাদ্দাম বিবস্ত্র ছিলো। ঘটনাস্থলেও এক্সিডেন্টের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দুর্ঘটনার নাটক সাজানো হচ্ছে। আমি শুনেছি রাব্বি, লিসানরা নাকি পলাতক। ওদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
সাদ্দামের প্রতিবেশি বাবলু মিয়া বলেন, আমরা লাশ নিতে শেরপুর এসেছি। মামলা করে বাড়ি ফিরবো।
গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, এটা কখনোই সড়ক দুর্ঘটনা না। এটি হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করছি। দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে জানতে নিহত সাদ্দামের বন্ধু রাব্বির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গাড়িদহ বাসস্ট্যান্ডে ফ্লাইওভারের নিচে বিবস্ত্র অবস্থায় এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থল গিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করে দ্রুত বগুড়ার শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও জানান, যুবকটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পুলিশ মাঠে কাজ শুরু করেছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে না-কি তাকে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবু কুমার সাহা বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সাদ্দামের ময়নাতদন্ত হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা হলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।