আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’

Spread the love

যুগধারা ডেস্ক :

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের (আওয়ামী লীগের) আগামী নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। যদিও এটা আগে বলে দিয়েছি, তবে এটাই হবে আমাদের মেইন, অর্থাৎ বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। বাংলাদেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না, দেশের সব মানুষ উন্নত জীবন পাবে।

সোমবার (১৫ মে) বিকেলে সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সফর নিয়ে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

ঘূর্ণিঝড় মোখা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে আমরা রক্ষা পেয়েছি। যদিও আমাদের সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারে কিছু ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত থেকে জানমাল রক্ষার জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। আমি নিজেও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছি, বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উপকূলীয় ১৩টি জেলায় ৭ হাজার ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছিলাম। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পুর্নবাসন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেসব এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দ্রুতই সেগুলো আবার মেরামতের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তাছাড়া খাবার, পানিসহ যা যা দরকার, সবকিছুরই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দেশে রিজার্ভ সম্পর্কে সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৬ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন রিজার্ভ ছিল শূন্য দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, এখন ৩১ বিলিয়ন ডলার আছে। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমাদের সব জমি আবাদ করব, আমরা অন্যের ওপর নির্ভর করব না। আমরা নিজেদেরটা দিয়ে নিজেরা চলব। 

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী কোনো দেশের কাছ থেকে কিছু কেনা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, যারা আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে, আমরা তাদের কাছ থেকে কিছু কেনাকাটা করব না। ভয়ের কিছু নেই, অনাবাদি জমি সব চাষ করে, যা আসে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব। শুধু উন্নয়নশীল না, উন্নত দেশেও খাদ্যের সমস্যা। একটার বেশি টমেটো কেনা যাবে না, ছয়টার বেশি ডিম কেনা যাবে না। রোজায় তো কোনো হাহাকার শোনা যায়নি। কেউ কি এসেছে, আপনাদের কাছে ভিক্ষা চাইতে? আসেনি। সবাই ইফতারের জন্য এগিয়ে এসেছে। আমাদের দল ও নেতাকর্মীদের এজন্য ধন্যবাদ জানাই। 

সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানো বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, যারা কোভিডের কারণে পরীক্ষা দিতে পারেনি বা নির্বাচনী পরীক্ষায় আসতে পারেনি, তাদের ক্ষেত্রবিশেষে শিথিল করা হয়েছে। এটা হয়েও গেছে।

তিনি আরো জানান, এখন ডিজিটাল ইকোনমিতে দেশ ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে যাচ্ছে। 

ঢাকা থেকে ১৫টি নদী হারিয়ে গেছে, পানির স্তর নেমে গেছে। জাতীয় নদী কমিশন নদীখেকোদের তালিকা প্রকাশ করেছে। আগামী নির্বাচনে নদীখেকোরা অংশ নিতে পারবে কি না – এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীখেকোদের কথা বলতে হলে স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের কথা বলতে হবে। তারাই কিন্তু নদীগুলো দখলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সময়ে অনেকগুলো পুকুর, খাল আমরা উদ্ধার করে দিয়েছি। আমরা ১৯৯৬ সালে দখলমুক্ত করে রেখে গিয়েছি, তা পরে বিএনপি সরকার এলে দখলে চলে গেছে। আমরা সবসময় পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছি। আইয়ুব খান আসার পর মতিঝিলের বিশাল বিল বন্ধ করে দেয়া হয়। জায়গাটা মতিঝিল, কিন্তু ঝিলের কোনো অস্তিত্ব নাই। হাতিরঝিল কেউ কেউ পৈতৃক সম্পত্তি বলে দখল করে নিতে চেয়েছিল। কেউ কেউ দলিলও বের করে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আমি বলেছিলাম, না, এটা দখলমুক্ত করতে হবে। পরে সুসজ্জিত করে দিয়েছি।

তিন দেশ সফর প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা জানান, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে তিনি ২৫ এপ্রিল জাপানের রাজধানী টোকিও পৌঁছান। ২৬ এপ্রিল সকালে জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। সম্রাট আমাকে স্বাগত জানান এবং দুই দেশের সম্পর্ক আরো গভীরতর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ওইদিন সন্ধ্যায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী আমাকে গার্ড অফ অনার দিয়ে নিজ কার্যালয়ে অভ্যর্থনা জানান। এরপর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা হয়। এছাড়া সেখানে তিনি জাপানি উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৯ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছান। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে আরো কয়েকটি কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি।

বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাসকে পদ্মা সেতুর একটি বাঁধাই করা ছবি উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, (পদ্মা সেতুর) পেইন্টিং আমি এজন্য নিয়ে গেছি যে, আমাদের দেশে যে খুব ভালো পেইন্টার আছে, তারা খুব চমৎকার পেইন্টিং করতে পারেন, সেটা জানানোর জন্য। বিশ্বের কারো পেইন্টিং প্রয়োজন হলে তারা যেন আমাদের কাছে চাইতে পারে।

পেইন্টিংয়ের বিষয়বস্তু হিসেবে পদ্মা সেতুকে বাছাই করার কারণ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পেইন্টিংয়ের বিষয়বস্তুটা এজন্য করেছি যে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রিয় জায়গাটা হচ্ছে পদ্মা সেতু। এটাই কারণ। আর কিছু নেই সেখানে। অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।

গত ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে সংস্থাটির প্রেসিডেন্টের হাতে পদ্মা সেতুর ছবি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক বিশ্বাসের মনোভাব নিয়ে উজ্জ্বলতর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বিশ্বব্যাংককে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। 

যুক্তরাষ্ট্র সফরে মার্কিন ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠক এবং বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে আলাদা বৈঠকে অংশ নেন শেখ হাসিনা। এছাড়া তিনি একটি নাগরিক সংবর্ধনায়ও যোগ দেন।

সফরের তৃতীয় পর্যায়ে লন্ডনে ব্রিটেনের রাজা ও রানি হিসেবে চার্লস তৃতীয় এবং তার স্ত্রী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে চার্লসের দেয়া অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। তিন দেশ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ৯ মে দেশে ফেরেন।

যুগধারা ডট টিভি/অন্তু