মো. শরিফুল ইসলাম: টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে অষ্টম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার ১৩ দিন পর পুলিশ মামলা নিলেও (মামলা নং-৮/১৯৬) ধর্ষিতার মেডিকেল টেস্ট হয়নি এখনো।
ঘটনাটি ঘটেছে কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নে।
ধর্ষিতা ওই স্কুল ছাত্রী জানান, চলতি মাসের ২ তারিখ রাত প্রায় সাড়ে ৮ টায় আমাকে বাড়ি সামনে কাঁচা রাস্তার পাশ থেকে ছাতিহাটি চকপাড়া গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে হাসিব (২৫) ও আয়নালের ছেলে রিপন সহ অজ্ঞাত আরও ৩ জন একটি সিএনজিতে তুলে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে অন্যান্যদের সহযোগিতায় হাসিব একাধিকবার ধর্ষণ করে। পরে ওইদিন রাত ৩ টার দিকে তারা আমাকে আমার বাড়ির পাশে রেখে যায়। তখন আমার চিৎকারে আমার মা-বাবা এগিয়ে আসলে বিষয়টি কাউকে জানালে আমাকে ও আমার মা-বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়।
এবিষয়ে ওই স্কুল ছাত্রীর মা বেগম জানান, ঘটনার পরদিন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন, ইউপি সদস্য বাবু খান ও মহিলা ইউপি সদস্য মলিনা বেগমকে জানাই। পরে কালিহাতী থানায় ছাতিহাটি চকপাড়া গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে হাসিব, আয়নালের ছেলে রিপন, মুনায়েম হোসেনের ছেলে আয়নাল ও নুরু মিয়ার ছেলে ফারুক সহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দেই। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কালিহাতী থানার এসআই আলামিন এলাকায় তদন্তে এসে আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো হুমকি দিয়ে বলে চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিয়ে আপোষ করে ফেলেন। পরে চেয়ারম্যান আমাকে মহিলা ইউপি সদস্য মলিনা বেগমের বাড়ীতে ডেকে নিয়ে ছেলে পক্ষকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে আপোষ নামায় জোড়পূর্বক আমার সাক্ষর নেন।
তিনি আরও জানান, এবিষয়ে ওসিকে জানালে তিনি মামলা নিতে গড়িমসি করে। পরে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে বিভিন্ন মহলের চাপে ঘটনার ১৩ দিন পর গত ১৫ নভেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আলামিনকে পরিবর্তন করে এসআই কামরুলকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে মামলা নিয়ে আমার মেয়েকে মেডিকেল করানোর জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমার মেয়ে অসুস্থ বলে পুলিশ ৭ দিন পর মেডিকেল করার জন্য আসতে বলে।
আমরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আসামিদের লোকজন মামলা তুলে নিতে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে চলছে। অপরদিকে ঘটনার ২০ দিন অতিবাহিত হলেও ধর্ষণের শিকার ওই স্কুল ছাত্রীকে মেডিকেল না করায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠেছে। তাঁরা মনে করছেন এটি একটি ধর্ষনের আলামত নষ্ট করার পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছু নয়।
এবিষয়টি ওই স্কুল ছাত্রীর মা গত রোববার (২০ নভেম্বর) টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাত করে অবগত করলে কালিহাতী থানার ওসিকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিষয়টি পাইকড়া ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন স্বীকার করে বলেন, জরিমানার টাকা ১০ তারিখে দেওয়ার কথা থাকলেও জানতে পারি তারা থানায় মামলা করেছেন। এজন্য টাকাগুলো আর দেওয়া হয়নি। পরে আমি বিষয়টি ওসি এবং এসআই আলামিনকে জানাই। ধর্ষনের অভিযোগ এলাকায় জরিমানা করে মিমাংসা করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নটি তিনি জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান।
কালিহাতী থানার এসআই আলামিন আপোষ মিমাংসার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটা আপোষ যোগ্য নয়। আইনগতভাবে আপোষ করার কারও এখতিয়ার নেই।
কালিহাতী থানার ওসি মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, প্রথমে ওই স্কুল ছাত্রীর পরিবার থানায় হুমকির অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকায় পুলিশ পাঠাই। পরবর্তীতে স্কুল ছাত্রী বলে আমাকে ধর্ষণ করেছে। আমরা সেই ধর্ষণের বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলা নিই। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং ওই স্কুল ছাত্রীকে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) মেডিকেলে পাঠানোর পরও হয়নি। পরে বুধবার (২৩ নভেম্বর) পূনরায় মেডিকেল করানোর জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল সেদিনও ওই ছাত্রীর শারীরিক সমস্যার কারণে মেডিকেল হয়নি। এতে আলামত নষ্ট করার পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই।