টাঙ্গাইলে নারী দিবসে চার নারী মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা

Spread the love

অন্তু দাস হৃদয় :

পরিবারের সকল সদস্যদের কথার অবাধ্য হয়ে নিজের জীবন রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল গ্রামের রবিজান বেওয়া। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ ও সম্মানী প্রদান করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তার নামে আট শতাংশ জমি বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। সেখানে বীর নিবাসও করা হবে। বুধবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রবিজান বেওয়াসহ টাঙ্গাইলের চার নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের পক্ষ থেকে তাদের নতুন শাড়ী পড়িয়ে অনুষ্ঠানে এনে উত্তোরীয় পরিয়ে দেয়া, ফুল, ক্রেস্ট ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।

নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিজান বেওয়া বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এতো সম্মান পাবো সেই লোভে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেইনি। তারপরও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সময়ে আমরা অনেক সম্মান পাচ্ছি।

এ জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার শেখ হাসিনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। মির্জাপুর, টাঙ্গাইল ও ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের আমাদের সম্মান জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নারী দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে বার বার সম্মাননা দেয়ায় আমরা গর্বিত।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি গুরত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ওলিউজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, পুলিশ সরকার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানব সম্পদ ও উন্নয়ন) নাফিসা আক্তার, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ফারজানা তাহের মুনমুন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) কণিকা মল্লিক। অনুষ্ঠানে মির্জাপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিজান বেওয়া, ঘাটাইল উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরা খাতুন, সখীপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছা. ফাতেমা খাতুন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শেফালীকে উত্তোলীয় পড়িয়ে, ক্রেস্ট ও ফুল দিয়ে সন্মাননা প্রদান করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা খাতুন বলেন, দেশকে ভালবেসে ও দেশ মাতৃকাকে রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। বর্তমান সরকার আমাদের যে সম্মান করছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অন্য কোন সরকার আমাদের এতো সম্মান করেনি। এছাড়াও বর্তমান জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার প্রতিটি ভালো কাজে আমাদের সাথে রাখায় আমরা গর্বিত।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পার হলেও আমাদের দেশে নারী ও পুরুষের বৈষম্য দূর হয়নি। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারী পুরুষের বেতন বৈষম সমান দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এর কারণ হচ্ছে, সরকারি চাকরীজীবী নারী পুরুষ সমান বেতন পায়। কিন্তু বেসরকারি যারা চাকরি করেন, তারা নারী পুরুষ একই প্রতিষ্ঠানে একই কাজ সমপরিমাণ করেন। কিন্তু বেতন বৈষম্য রয়েছে। তাই নারী পুরুষের বেতন বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন।

অপর বীর মুক্তিযোদ্ধা শেফালী বলেন, গত ১৪ বছরে অনেক সম্মান পেয়েছি। আমার বাড়ি ঘরের অবস্থা ভাল নয়। আমাকে সরকারিভাবে বীর নিবাস করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, টাঙ্গাইলের আট নারী বীর মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে দুই জন নিহত ও দুই জন অসুস্থ থাকায় বাকি চার নারী মুক্তিযোদ্ধাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে চার নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা জানাতে পারায় জেলা প্রশাসন গর্বিত।

যুগধারা ডট টিভি/অন্তু দাস হৃদয়