টাঙ্গাইলে আওয়ামী রাজনীতি আলোচনায় মুরাদ সিদ্দিকী

Spread the love

অন্তু দাস হৃদয় :

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম) এর ভাই আলহাজ্ব মুরাদ সিদ্দিকীর আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার গুঞ্জন চলছে। শোনা যাচ্ছে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছেন সিদ্দিকী পরিবারের এই সদস্য।

গত (২৪ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলের শহীদ মিনারে কাদেরিয়া বাহিনীর উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র সমর্পন দিবস উদযাপন করা হয়।
কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর আমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস এ সময় উপস্থিত হন। এই অনুষ্ঠানের পর থেকেই অনেকে ধারণা করছে আওয়ামী লীগ অথবা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোটবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে যাচ্ছেন বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী।

অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও ছোট ভাই আজাদ সিদ্দিকী উপস্থিত থাকলেও আরেক ছোট ভাই আলহাজ্ব মুরাদ সিদ্দিকী এ সময় উপস্থিত ছিলেন না।

এ দিকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ধারণা, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সমঝোতা হবে। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী হয় আওয়ামী লীগে ফিরবেন না হয় কৃষক শ্রমিক জনতালীগ থেকে তিনি এবার নির্বাচন করবেন।

গত বছরের (২৩ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর সাক্ষাৎ করার পর রাজনৈতিক মহলে আরো বেশি আলোচনা শুরু হয়েছে।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা জানান, ১৯৯৯ সালে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম) আওয়ামী লীগ ছেড়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে নতুন দল গঠন করেন। মুরাদ সিদ্দিকী তখন আবদুল কাদের সিদ্দিকীর দলে যোগ দেন। ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন আলহাজ্ব মুরাদ সিদ্দিকী। তারপর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে যান।
২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

তবে, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। মূলত ২০০৯ সাল থেকে মুরাদ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে যোগদানের চেষ্টা করছেন। ২০১৫ সালে মুরাদ সিদ্দিকীর অনুসারী টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমান মিরনসহ অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তারা পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগে পদপদবিও লাভ করেন। কিন্তু মুরাদ সিদ্দিকী যোগদান করতে ব্যর্থ হন। দলে ঢুকতে না পারলেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি এবং দলীয় কার্যালয়ে আলহাজ¦ মুরাদ সিদ্দিকী যাতায়াত শুরু করেন।

এ দিকে আলহাজ্ব মুরাদ সিদ্দিকীর আওয়ামী লীগে যোগদান ও জেলা কমিটিতে পদপ্রাপ্তির বিষয় নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। তাকে জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন বলে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন।

মুরাদ সিদ্দিকী বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করা হবে। এ অবস্থায় মুরাদ সিদ্দিকী জেলা আওয়ামী লীগে পদ পাচ্ছেন, নাকি এবারও দলে ঢুকতে ব্যর্থ হচ্ছেন এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

গত (৭ নভেম্বর) টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আলহাজ্ব মুরাদ সিদ্দিকী প্রায় ১৫ হাজার লোকের একটি মিছিল নিয়ে অংশ গ্রহন করেন সম্মেলনে।
সম্মেলনে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুককে সভাপতি এবং (বাসাইল-সখীপুর)-৮ আসনের সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

এ বিষয়ে আলহাজ্ব মুরাদ সিদ্দিকী’র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি আওয়ামী লীগের আদর্শের বাইরের কেউ নই। সব সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেছি। আওয়ামী লীগের সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমি অংশগ্রহণ করছি।

এ ব্যাপারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের কথা চলছে। আর মুরাদ সিদ্দিকী আমাদের দলের কেউ নয়।

এ দিকে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী ও কয়েকজন সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ ভালো অবস্থায় রয়েছে। মুরাদ সিদ্দিকীকে দলীয় পদ দেওয়া হলে আবার একটি নতুন বলয় সৃষ্টি হতে পারে। তাই তারা এই মুহূর্তে মুরাদ সিদ্দিকী দলে আসুক তা চান না। তিনি দলে এলে টাঙ্গাইল সদর অথবা কালিহাতী আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তার যোগদান ওই আসন দুটির বর্তমান সংসদ সদস্যদের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) বলেন, মুরাদ সিদ্দিকী দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগে যোগদানের চেষ্টা করছেন- এটা সত্যি। আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।