নাগরপুর প্রতিনিধি :
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সারাদেশের ন্যায় নাগরপুরেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) সংসদীয় আসনে সাধারণ ভোটার ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে রাজধানী ছেড়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এখন সংসদীয় আসনে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। করছেন গণসংযোগ, গনসংযোগে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অতীত ও বর্তমানের স্ব-স্ব সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মকান্ড সাধারণ ভোটারের মাঝে চিত্তাকর্ষকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। নানা প্রতিশ্রুতিতে বাঁধতে চাইছেন নিজ অস্তিত্ব। আর এ সুযোগে উপজেলার তৃণমূল নেতারা এখন বহু ভাগে বিভক্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন মিডিয়ায় কাঁদা ছুঁড়াছুঁড়ি করে পছন্দের প্রার্থীকে এগিয়ে নেবার চেষ্টা করছেন।
জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই বর্তমান সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুকে নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে বা জনসংযোগকালীন ঢালাও বক্তব্য দিয়ে চলছেন।
সাবেক ছাত্রনেতা তারেক শামস খান হিমুর সম্প্রতি জনসংযোগ কালীন এক বক্তব্যকে ঘিরে চলছে তোলপাড়। উপজেলা আওয়মী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারেক শামস খান হিমুকে প্রধান অতিথি করার কারনে বর্তমান সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর সমর্থক গণ বিভিন্ন মিডিয়াতে বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত কমিটির কার্যক্রম ও নেতৃবৃন্দ নিয়ে অযাচিত বক্তব্য দিয়ে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন।
নাগরপুরের আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের সমর্থক নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি। নতুন প্রজন্মের কাছে খোলাসা হচ্ছে স্ব স্ব চরিত্র। বেকায়দায় নতুন ভোটার ও আওয়ামী সমর্থকগণ। অথচ আওয়ামী লীগের ঘরোয়া কোন্দলে বিএনপি মাঠে না থেকেও আত্মতৃপ্তিতে ভোটযুদ্ধে অংশ নেবার নিরব ভূমিকা রেখে চলেছেন। কারন বিএনপি মনে করে, সংসদীয় এ আসনটিতে বিএনপির বিরাট ভোট ব্যাংক রয়েছে। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে সাধারণ মানুষ তাদের নির্বাচিত করবেন।
অপরদিকে, আওয়ামী মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নৌকা পেলেই নিশ্চিত পাস- এ আশায় মনোনয়ন যুদ্ধে নেমে আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন জনগণের কাছে তুলে না ধরে নিজেদের কিচ্ছা কাহিনী প্রচার করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ জানান, শুধু নাগরপুর- দেলদুয়ার সংসদীয় আসনেই নয়, এ ভাইরাস ছড়িয়েছে সারা টাঙ্গাইল জুড়ে। এরুপ কাদা ছোঁড়াছুড়ি করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্যের সমর্থক আর যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের বেনিফিট কি ? যখন আসন্ন সংসদ নির্বাচন, ঠিক এমন সময় তারা নিজেরা নিজেদের প্রতিদ্বন্দী ভাবতে শুরু করছেন আর দলীয় ইমেজ নষ্ট করছেন। আওয়ামী লীগের বাইরেও যে আরো দল আছে তারা বেমালুম ভুলে গেছেন। এতে ক্ষতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের, ক্ষতি দেশরতœ শেখ হাসিনার।
তবে সম্প্রতি নির্বাচন ঘিরে বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও সংশ্লিষ্ট এলাকায় আসা-যাওয়া শুরু করেছেন। অনেক আসনে বড় দুই দলের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। তারা বিভিন্নভাবে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যরা প্রচারণা ও লবিং শুরু করেছেন।
এ আসনে নতুন মুখসহ ১৫ থেকে ২৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। বিগত দিনে সংগঠিত জাতীয় সংসদীয় নির্বাচনে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই প্রতিদ্বন্দিতা হয়েছে।
টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আহসানুল ইসলাম টিটু। আবারও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এ ছাড়াও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সাবেক তুখোড় ছাত্রনেতা তারেক শামস খান হিমু, নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাকিরুল ইসলাম উইলিয়াম, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আলহাজ্ব মো. খুরশিদ আলম বাবুল, নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও নাগরপুর সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. কুদরত আলী, সম্মানীত সদস্য কাজী এ.টি.এম আনিসুর রহমান বুলবুল, দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন এম শিবলী সাদিক, নাগরপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড উপদেষ্টা খন্দকার আছাব মাহমুদ, বঙ্গবন্ধু আওয়মী আইনজীবি পরিষদ সদস্য ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব, সতন্ত্র সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুক্তরাজ্য শাখা ব্যারিস্টার এম. আশরাফুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রান ও সমাজ কল্যান সম্পাদক ইনসাফ আলী ওসমানীর নাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- দলের কেন্দ্রীয় নেতা নুর মোহাম্মদ খান, জেলা বি.এন.পি সিনিয়র সহসভাপতি এ্যাড. আলী ইমাম তপন, নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ ছালাম, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম স্বপন, উপজেলা বিএনপির সম্মানীত সদস্য দিপালী চক্রবর্তী, সদস্য রবিউল আওয়াল লাভলু, সদস্য খন্দকার ওয়াহিদ মুরাদ, সদস্য শরীফ উদ্দিন আরজু, সদস্য এ্যাড. মো. ইকবাল হোসেন খান, সদস্য হাইকোর্ট সাবেক ট্রেজারার এ্যাড. নাসরিন আকতার, দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ খান (চাঁন খা), সদস্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরাম যুক্তরাজ্য ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন, টাঙ্গাইল জেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সদস্য দিলিপ ধর সেন্টু, জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহিম সুমন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের অম্ভ্যন্তরীন কোন্দল সম্পর্কে নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাকিরুল ইসলাম উইলিয়াম বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষে তৃনমূল আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করে নাগরপুর-দেলদুয়ার এর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। নাগরপুরের আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ও সু-সংগঠিত। প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের মধ্যে কোন কোন্দল নেই।
নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. কুদরত আলী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা নাগরপুর-দেলদুয়ার আসনে যাকে নৌকা প্রতীক দিয়ে পাঠাবে নাগরপুর উপজেলা আওয়মী লীগ এবং তৃনমূল আওয়ামী লীগ প্রস্তুত আছে সেই প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য।
নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ অতীতেও নাগরপুরে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে ভবিষ্যতেও করবে, সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। তবে আমি আশা করি যোগ্যতম প্রার্থীকে জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিবেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য, কৃষক লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক সহ-সভাপতি কাজী এ টি এম আনিসুর রহমান বুলবুল বলেন, ১৯৭৯-৮০ তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ডাকসুর নির্বাচিত সম্পাদক সমাজসেবা ছিলাম।
১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্থান ছাত্রলীগ এর একজন সদস্য হিসেবে ছাত্রলীগ এর মুলমন্ত্র “শিক্ষা-শান্তি- প্রগতির হাত ধরে তখন থেকেই আমার রাজনীতি শুরু। ১৯৬৯ এর গণআন্দোলন, ১৯৭০ এর নিবাচন, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে না দিয়ে প্রতিহত করা এবং স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন সহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ ও নেতৃত্ব দিয়েছি। আমার নিজের জন্য চাইবার কিছু নাই। শুধু একটিবার ১৩৫ টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের এমপি হিসেবে দায়িত্ব পেতে চাই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নিবাচনে আমাকে মনোনয়ন দিলে আমার সেবা ও কর্মকান্ডে যাতে সাধারণ মানুষ আমাকে আমৃত্যু মনে রাখে- সে লক্ষ্যে কাজ করতে চাই। আমি প্রমাণ করতে চাই যে, একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে অর্থাৎ শাসক হিসেবে নয়, সেবক হিসেবে তাদের সেবা করতে চাই।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মানীত সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক মো. খুরশিদ আলম বাবুল বলেন, দেশরত্ন শেখ হাসিনা টাাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) সংসদীয় এলাকায় আমাকে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করলে সাধারন মানুষের ভোটে যদি আমি নির্বাচিত হতে পারি, তা হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি যে জনগনের কল্যানে কাজ করে তা আমি দেখিয়ে দিবো। আর এই সময় জনকল্যানে জনপ্রতিনিধির কার্যক্রম এক ইতিহাস হয়ে থাকবে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী বঙ্গবন্ধু আওয়মী আইনজীবি পরিষদ সদস্য ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন আমি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানির পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছি।
আপনারা জানেন আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নাগরপুর দেলদুয়ার তথা টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং আমি আশা করছি। আমি দেশ – জাতি ও নাগরপুর দেলদুয়ার এর জন্য যতটুকু কাজ করেছি এবং ভবিষ্যতে যে কাজগুলো করব তার ওপর বেস করে প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন। প্রধানমন্ত্রী যে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে সকল কাজগুলো করছেন আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তা করছি। অনেকেই বলছে যে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভিন্ন দ্বিধাদ্বন্দ বা বিভিন্ন বইপরোত্ব প্রকাশ পাচ্ছে, আমি মনে করি আমার কাছে এটা কোনরকম ইস্যু আপাতত নাই। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম ডিফেন্স অফ অফেনেন হতেই পারে বিভিন্ন নেতার সাথে। আমার সাথে কারো কোন প্রকার কোন দ্বন্দ নেই। নাগরপুর দেলদুয়ার আওয়ামী লীগের যারা আছেন তাদের সাথে হাতে হাত ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের সাথে মিলে নাগরপুর দেলদুয়ারের উন্নয়ন এর জন্য যা যা কাজ করা দরকার তা করছি। বিভিন্ন লোকজনের বিপদে আমি হাত বাড়িয়েছি এবং করোনা কালীন সময়ে পাশে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি কিন্তু এখানে এসে জনগণের পাশে থেকেছি এবং আমার সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব ততটুকু করার চেষ্টা করেছি এবং ভবিষ্যতেও আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের জন্য করার চেষ্টা করব।
দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন এম শিবলী সাদিক বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেটা বলতে হয় দলের জন্য যেটা দৃশ্যমান গ্রুপিং বা দলের মধ্যে যে কোন্দল তার জন্য বর্তমান এমপি দায়ী। সে তার কিছু পৃষ্ঠপোষক লোক আছে তাদেরকে দিয়ে দলটাকে খন্ড বিখন্ড করে এখন দেলদুয়ার নাগরপুর এর অবস্থা এমন করছে ‘এমপি ভার্সেস আনাদার পারসন’।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর নমিনেশন যে পাবে, তার পক্ষে দেলদুয়ার উপজেলা কাজ করবে। আমরা আশা করি এবার জননেত্রী শেখ হাসিনা নমিনেশন দিতে ভুল করবেন না।
সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য যুব ও ক্রীড়া উপকমিটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তারেক শামস খান হিমু বলেন, ৯৬ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের সাথে প্রথম মুনাফেকী ও বেইমানী করেছিলো বর্তমান এই সংসদ সদস্যের পরিবার। ৯৬ তে তার ছোট ভাই মাসুদ ফুটবল মার্কা ও তার মামা গোলাম মোহাম্মদ খান তারেক তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০০১ এ দেয়াল ঘড়ি মার্কায় নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে নাগরপুরে আওয়ামী লীগ ও নৌকার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার সূত্র পাত করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে হরিণ এবং আনারস মার্কা সৃষ্টি হয়েছিল।
সম্প্রতি বর্তমান সংসদ সদস্যের অনুসারী কতিপয় বহিস্কৃত কিছু নেতাকর্মী মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাবার ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্নের উত্থাপন হয়েছে তা সম্পূর্ন ভীত্তিহীন বানোয়াট। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগ করতেন আমার বাবাও সেই আওয়ামী মুসলিম লীগের সদস্য ছিলেন। ছাত্র অবস্থা থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্র, জেলা ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। যদি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমার বাবার বিতর্কিত ভূমিকা থাকতো তাহলে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন পদে আমাকে আসীন করতেন না।
নাগরপুরে আওয়ামী লীগ সু-সংগঠিত। শুধু তৃনমূল ও উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সাথে সংসদ সদস্যের কোন যোগাযোগ নাই। যতদিন ঘনিয়ে আসছে ততই সংসদ সদস্যের সাথে তৃনমুল আওয়মী লীগ এর দুরত্ব বেড়েই চলেছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সাধারন মানুষ খুশি থাকলেও বর্তমান সংসদ সদস্যের উপর চরম বিরক্ত।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এড. তারানা হালিম বলেন, আওয়মী লীগ একটি বৃহৎ দল, এ দলে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকতেই পারেন। তাই বলে নিজেদের মধ্যে কোন্দল হবে এটা আশা করি না। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সকলে মিলে সাধারনের মাঝে পৌছে দেওয়াই আমাদের কাজ। আমি যদি ০৯ টি বছর একটি এলাকাকে সন্তানের মত পালার পরে সেটাকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার মত মানসিক উদারতা দেখাতে পারি, আমার মনে হয় আমাদের দলের প্রত্যেকের তাই করা উচিৎ। আমাদের তৃনমূলকে মূল্যায়ন করতেই হবে।
তৃনমূল ছাড়া কখনও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দাঁড়াতে পারবে না। এখন কাদা ছোঁড়াছুড়ির সময় নয়। অথচ এ সময় আমরা একজন আর একজনকে কচুরি পানা বলছি বা আরও অন্য কিছু বলছি, এটাই কি আওয়ামী লীগ ? এটা প্রকৃত আওয়ামী লীগ, আমি মনে করি না।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও সাবেক আহ্বায়ক জেলা যুবদল এ্যাড. আলী ইমাম তপন বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এমন নগ্নভাবে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করছে এটিই আমাদের সাপেবর হয়ে কাজ করবে। এই আসনে বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে জনকল্যানে কাজ করেছে, আশা করি জনগন বিএনপিকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সম্ভাব্য প্রার্থী নুর মোহাম্মদ খান বলেন, তত্বাবঅধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে। সেক্ষেত্রে উপজেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন কোন্দল বিএনপির কোন উপকারে আসবে না। আওয়ামী লীগের কোন্দল আওয়ামী লীগের কাছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এগুলো হয়। এ কোন্দল বিএনপির কাউন্টেবল নয়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ ছালাম বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলে অম্ভ্যন্তরীন কোন্দল থাকে তবে নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ এর কোন্দল প্রকাশ্যে। আওয়ামী লীগ এর সাথে বর্তমান এমপির কোন্দল চরম আকার ধারন করেছে। এতে বিএনপির কোন ফায়দা নেই। সুষ্ঠ ভোট হলে বিএনপি এ আসনে বিপুল ভোটে জয় লাভ করবে।
এ্যাড. নাসরিন আকতার বলেন হাইকোর্টের সাবেক ট্রেজারার এ্যাড. নাসরিন আকতার বলেন, যদি আমার দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে ও আমি মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হই তাহলে দ্বারে দ্বারে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধান কল্পে কাজ করবো ইনশাল্লাহ।
বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমি টাঙ্গাইল-৬ আসনে আবারও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করি। কারন, আমি বা আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আওয়ামী লীগ, নৌকা, বঙ্গবন্ধু ও দেশরত্ন শেখ হাসিনার সঙ্গে সব সময় ছিলাম ও আছি। ৬৬/৬৯ এ আমার বাব-মা দুজনেই ছাত্রলীগ করতেন। আমার মা বাংলাদেশ মহিলা আ’লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ছিলেন, ট্রেজারার ছিলেন।
আমার বাবা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সম্মানিত সদস্য হিসেবে মৃত্যু বরণ করছেন। আমাদেরতো সভাপতি শেখ হাসিনা, নৌকা বা বঙ্গবন্ধুর বাইরে চিন্তা করার কিছু নাই। আজ যারা মনোনয়ন চাচ্ছেন তারা বলুক -তাদের পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের জন্য কি করেছেন? কি ছাড় দিয়েছেন। ৭৫’ এ বঙ্গবন্ধু শাহাদাৎ বরণ করার পর ও ৯৩/৯৬ তে আমার বাবা জেল খেটেছেন।
২০০১ এ আমার বাবা, আমি ও আমার ছোট ভাই এক পরিবারের তিনজন জেল খেটেছি। এরকম আর একটা পরিবার দেখান তো যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কে বুকে লালন করে, নৌকা ও শেখ হাসিনাকে ভালবেসে দেশের জন্য এমন ত্যাগ স্বীকার করেছেন ? ২০১৮ সালের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো আজকে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন তারা কেউ নৌকার পক্ষে মাঠে ছিলেন কি না ? যদিও তারা কমিটেড ছিলেন যে, যিনি নৌকা প্রতীক পাবেন তার পক্ষেই তারা কাজ করবেন।
কারন, এ বিজয় শুধু আমার একার ছিলো না। এ বিজয় দেশরতœ শেখ হাসিনার, এ বিজয় স্বাধীনতার স্বপক্ষের। তারা কিন্তু ২০০৮, ১৪ ও ১৮ তে নৌকার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামেন নাই। আমি কিন্তু প্রত্যেক নির্বাচনেই নৌকার পক্ষে ছিলাম, আমৃত্যু নৌকার পক্ষেই আছি। ২০১৪ তে মনোনয়ন পাইনি তারপরও মরহুম খন্দকার আব্দুল বাতেন সাহেবের সাথেই কাজ করেছি।
যুগধারা ডট টিভি/অন্তু দাস হৃদয়