জুয়েল রানা ঃ টাঙ্গাইলের সখীপুর-বাসাইল উপজেলার সীমান্তবর্তী দাড়িয়াপুর-গিলাবাড়ী সড়কের বরইতলা খেয়াঘাটে বংশাই নদে সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকো ও নৌকায় বংশাই পারাপারে অসংখ্য নারী, শিশু ও শিক্ষার্থী প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। সময় মতো নৌকা না পেয়ে গভীর রাতে শোনা গেছে অনেক গর্ভবতী নারীর করুণ আর্তনাদ। এভাবেই চলছে প্রতিশ্রুতি ও প্রতীক্ষার স্বাধীনতাত্তোর ৫২ বছর। কথাগুলো জানালেন ওই নদ পারাপারে নিয়মিত চলাচলকারী বাসাইল উপজেলার গিলাবাড়ী গ্রামের নদ ঘেঁষা ষাটোর্ধ্ব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (অব.) খন্দকার ফরহাদ হোসেন।
বরইতলা ঘাট দিয়ে যাতায়াতকারী লোকজন জানান, টাঙ্গাইলের একই সংসদীয় এলাকা (টাঙ্গাইল-৮) সখীপুর উপজেলার পশ্চিমাংশে দাড়িয়াপুর ইউনিয়ন, বাসাইল উপজেলার পূর্বাংশ কাউলজানী ইউনিয়নের গিলাবাড়ী-সুন্না বংশাই নদ দ্বারা বিভক্ত। এ দুইটি উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে নিবিড় বন্ধন থাকলেও স্বাধীনতার ৫২ বছরেও বরইতলা ঘাটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বংশাই নদ দুটি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন করে রেখেছে। ফলে সখীপুর-বাসাইলের সীমান্তবর্তী দাড়িয়াপুরের বরইতলা ঘাট এলাকায় সেতু না থাকায় দুটি উপজেলার ২৫ গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
নদ পারাপারে একমাত্র ‘সেতুবন্ধন’ নৌকা ও বাঁশের সাঁকো। ফলে প্রতি বছরই ঝুঁকি নিয়ে ওই নদ পারাপারে সাধারণ মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। অকালে হারাচ্ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। ২০০ গজ প্রশস্ত নদের জন্য ঘুরতে হচ্ছে কমপক্ষে ৮-১০ কিলোমিটার। ভুক্তভোগী গ্রামগুলো হচ্ছে সখীপুর উপজেলার দাড়িয়াপুর, চাকলাপাড়া, কৈয়ামধু, বেতুয়া, দেওবাড়ী, প্রতিমাবংকী, সিলিমপুর, লাঙ্গুলিয়া, বাসাইল উপজেলার গিলাবাড়ী, কল্যাণপুর, বালিয়া, ডুমনীবাড়ী, সুন্না, বার্থা, কলিয়া ও কাউলজানীসহ কমপক্ষে ২৫ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বরইতলা ঘাটের উভয়পাশে রয়েছে দুইটি উচ্চ বিদ্যালয়, চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মাদরাসা, পাঁচটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও পাঁচটি সাপ্তাহিক হাট-বাজার। বাসাইলের গিলাবাড়ী গ্রামের নদীরপাড় ঘেঁষা কৃষক গোলাম রাব্বানী জানান, ওই নদে সেতু না থাকায় খাদ্যশস্য, শাক-সবজি ও মুমূর্ষু রোগী নিয়ে সখীপুর যেতে ৩ কিলোমিটারের স্থলে ১০ কিলোমিটার বেশি ঘুরতে হয়।
দাড়িয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা আলমাস উদ্দিন বলেন, গর্ভবর্তী নারী ও বৃদ্ধদের চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে অনেক রোগীকে সময় মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনেক রোগীই দুর্ঘটনার শিকার হন। দাড়িয়াপুর এসএ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক সানোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা নৌকা ও বাঁশের সরু সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সময় গত ২০ বছরে অনেক শিক্ষার্থীর তাজা প্রাণ চলে গেছে ওই নদে। উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, ইতিপূর্বে সেতুটি নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে সেতুটি নির্মাণের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সটাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. জোয়াহেরুল ইসলাম জানান, দুইটি উপজেলার লাখো মানুষের প্রাণের দাবি এটি। সেতুটি নির্মাণে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, সেতুটি দ্রুত একনেকে অনুমোদন দেওয়া হবে।