দেলদুয়ার (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি : দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের আলোচিত জনি (২৩) হত্যা মামলায় লাউহাটী এম. আজহার মেমোরিয়াল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া উঠেছে।
নিহত জনির বাবা বাদশা মিয়া বলেছেন, লাউহাটী এম. আজহার মেমোরিয়াল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমার ছেলে হত্যায় জড়িত। কিন্তু তিনি কৌশলে পার পেয়ে যাচ্ছেন। ২০২৩ সালের ১৯ জুন বুধবার বিকেলে উপজেলার লাউহাটি আমিন মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে জনিকে দেশিও অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার জনিকে মৃত ঘোষনা করেন।
ঘটনার পরদিন ২০ জুন জনির বাবা মো. বাদশা মিয়া বাদী হয়ে ছেলে হত্যার অভিযোগে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ব্যাপারে দেলদুয়ার থানায় হত্যা মামলা হলে সুইপ নামে একজন চাকুসহ গ্রেফতার করা হয়। যদিও বাকী আসামীরা পলাতক রয়েছে। নিহত ২৩ বছর বয়সী জনি উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের হেরন্ডপাড়ার মো. বাদশা মিয়ার ছেলে।
জনির বাবা বলেন, লাউহাটী এম. আজহার মেমোরিয়াল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষার ঘটনায় আমার ছেলেকে হত্যা করেছে এটা প্রধান শিক্ষক জানে। আমার ছেলেকে হত্যাকান্ডের অনেক তথ্য প্রধান শিক্ষকের কাছে রয়েছে। তিনি ঘটনাটি জেনেও না জানার ভান করেছেন।
তিনি আরো বলেন, প্রতিনিয়ত পলাতক আসামীদের হুমকিতে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করছেন। সুইপ নামে একজন আসামী গ্রেপ্তার হলেও সারুফ ও মারুফ আসামী গ্রেফতার হয়েও জামিনে এসে পলাতক আর শাহাদৎ নামে একজন আসামী টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে নাম কেটে নিয়েছেন। তারাসহ বাকী পলাতক আসামীদের হুমকিতে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দুই কন্যাকে নিয়ে আতংকিত।
পত্রিকার সংবাদ প্রকাশের পর ছেলে হত্যাকান্ডের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছেন, অন্যথায় তার পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, জনি হত্যা মামলায় মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এমিম খান প্রান্ত। এমিম খান প্রান্তকে এই হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ, পরামর্শ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেন মাসুম মিয়া, পলাশ ভূঁইয়া, রাশিদুল ইসলাম পনির, জুবায়ের পারভেজ জিহান, জুলহাস এবং রাহাত।
নিয়োগ পরীক্ষায় চাকুরী পাওয়া কম্পিউটার অপারেটরের মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ওই দিন হেরন্ডপাড়া ও লাউহাটী গ্রামের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর জনি নামে একজন সিএনজি ও অটোর লাইনম্যান প্রথমে মারাত্মকভাবে জখম হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান।
অভিযোগের বিষয়ে লাউহাটী এম. আজহার মেমোরিয়াল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, হেরন্ডপাড়া সাথে লাউহাটী গ্রামের মারামারি ঘটনা ঘটলেও সেটা নিয়োগ পরীক্ষার সাথে সর্ম্পক আছে কিনা তার জানা নাই। তার মতে দুই গ্রামের ১০০ বছরে শত্রুতা সেটা তারাই জানে। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। খন্ডকালীন শিক্ষক জোবায়ের পারভেজ জিসান ছিলেন আসামীদের একজন। অথচ প্রধান শিক্ষক তার ব্যাপারেও কিছুই জানেন না।
প্রধান শিক্ষকের দাবী, নিয়োগকে কেন্দ্র করে কোন ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটেছে সেটা দুইগ্রামের পূর্ব শত্রুতা। তিনি নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলের পরে কোন মিছিলও তিনি দেখেনি বলে জানান। তিনি ওই দিন নিয়োগ বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে বিদ্যালয় ত্যাগ করে চলে যান।
তবে এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। নিয়োগ পরীক্ষার সূত্র ধরেই জনি হত্যা কান্ড ঘটেছে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমুল হাসান, নিয়োগপ্রাপ্ত মধ্যে থেকে আয়া লিজা আক্তার ও নৈশ্য প্রহরী আলআমিনও বিভিন্ন চাপে তথ্য গোপন করে এ বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না বলে জানায়।
ডাক্তার সাইদুর রহমান ও ব্যবসায়ী শফিক বলেন, লাউহাটী এম. আজহার মেমোরিয়াল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগকে কেন্দ্র করেই গোলযোগ। প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম স্বীকার না করলেও তিনি বিষয়টি ভালো ভাবেই ওয়াকিবহাল। তিনি মূলত জানা জিনিস গোপন করছেন। তিনি মুখ খুললেই হত্যাকান্ডের সুরাহা হবে।
ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, নিয়োগ নিয়েই হত্যাকান্ড হয়ে এটা সত্য। নিয়োগের পর মিছিল মিটিং এবং এলাকার চেয়ারম্যান লাউহাটী শাহিন খান প্রথমে মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে এই হত্যাকান্ড হয়। প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম ঠিকমত দায়িত্ব পালন করলে হত্যাকান্ডর মতো জগন্য ঘটনা এড়ানো যেত।
লাউহাটী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহিন খান বলেন, শুনছি বিদ্যালয়ের নিয়োগকে কেন্দ্র করেই জনি হত্যাকান্ড ঘটেছে। এলাকায় মিছিলি মিটিংয়ের পর ঈদের পর বসে মীমাংসা হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তার আগেই এই হত্যাকান্ড হয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ হত্যাকান্ডে জড়িত আছে কিনা, সেটা আমার জানা নেই।
সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সরোয়ার বলেন, আমি এখনও এই মামলার তথ্য সংক্রান্ত ফাইল বুঝে পাইনি।