যুগধারা ডেস্ক :
১৪৪৪ হিজরি সনের পবিত্র হজ আজ। প্রতি হিজরি বছরের ৯ জিলহজ মুসলিম উম্মাহকে হজ পালনে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে হয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল-হাজ্জু আরাফাহ অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজ। এ দিন মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি মানুষকে ক্ষমা করেন। ক্ষমার আশায় সারাবিশ্ব থেকে আগত হজযাত্রীর আরাফায় তাকবির, তালবিয়া, ক্ষমা প্রার্থনা ও কান্না-রোনাজারিতে ব্যস্ত। বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন স্থল বা মিলনমেলা এ আরাফার ময়দান।
আজ মঙ্গলবার (২৭ জুন) আরাফাত দিবসে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ নামিরা থেকে হজের খুতবা ও নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে পালিত হবে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আরাফাতে এ দিনের আনুষ্ঠানিকতাকে মূল হজ বলা হয়। আরাফায় অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে হজের ভাষণ দেবেন সৌদি আরবের সিনিয়র উলামা কাউন্সিলের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ।
ইতিমধ্যে লাখো হাজির ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাতের ময়দান। বড়-ছোট, ধনী-গরিব, সাদা-কালো কোনো ভেদাভেদ নেই আজ। সব ভেদাভেদ ভুলে শুধু দুই খণ্ড সাদা কাপড় শরীরে জড়িয়ে সবাই একত্রিত হয়েছে আরাফার ময়দানে।
মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে জীবনের সব গুনাহ মাফ করার আকুল আকাঙ্ক্ষায় ৪৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেই আজ আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছেন তারা। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হলো সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ময়দানেই অবস্থান করা।
মিনা থেকে আরাফাতের ১৪ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব পাড়ি দিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ বাস। অনেকেই গিয়েছেন পায়ে হেটে। হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ হাজিদেরও কিছু সময়ের জন্য অ্যাম্বুল্যান্সে করে এখানে আনা হবে।
হাজিদের মুখে ধ্বনিত হচ্ছে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’অর্থ- আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো অংশীদার নেই। আমি হাজির। সব প্রশংসা ও অনুগ্রহ শুধুই তোমার। সব রাজত্ব তোমার।
দুপুরে মসজিদে নিমরায় হজের খুতবার মাধ্যমে শুরু হবে মূল আনুষ্ঠানিকতা। উপস্থিত হাজিদের উদ্দেশে মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা পড়বেন শায়খ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ।
হাজিরা আরাফাতের ময়দানে জোহর ও আসর নামাজ পড়বেন। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া-মোনাজাতে মগ্ন থাকবেন। সূর্যাস্তের পর সবাই মুজদালিফার উদ্দেশে গমন করবেন। সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ে রাত কাটাবেন। মুজদালিফা থেকে তিন জামারার জন্য তারা পাথর সংগ্রহ করবেন।
পরদিন মিনায় বড় জামারায় গিয়ে পাথর ছুঁড়বেন। এরপর কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছোট বা মুণ্ডন করবেন। তখন ইহরামের কাপড় বদলে স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সায়ি (সাতবার দৌড়ানো) করবেন। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় যাবেন। মিনা থেকে তিন দিন (বড়, মধ্যম, ছোট) ২১টি করে ৬৩টিসহ মোট ৭০টি পাথর জামারায় নিক্ষেপ করবেন। এরপর মক্কায় বিদায়ি তাওয়াফ করে হজের সব কাজ শেষ করবেন।
রোববার মক্কায় তাওয়াফ আল কুদুমে অংশ নেয়ার পর, মিনায় সমবেত হন হাজিরা। সোমবার সারাদিন এখানেই বিভিন্ন তাবূতে অবস্থান করেন তারা। আগামীকাল সৌদি আরবে পালিত হবে ঈদুল আযহা।
সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, করোনার পর এবারই প্রথম বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশ থেকে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ১৮৮ হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছান। আর সৌদি আরবের ভেতর থেকেও বিপুলসংখ্যক লোক হজ করছেন।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজ পালন করতে এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন সৌদি আরব গেছেন। গত ২১ মে থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ৩২৫টি ফ্লাইটে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৬ হজযাত্রী মক্কা ও মদিনায় মারা গেছেন। বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ফিরতি ফ্লাইট আগামী ২ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।