স্টাফ রিপোর্টার:
অবৈধভাবে ব্যাটারি ফ্যাক্টরির বিষাক্ত বর্জ্যে হুমকির মুখে পড়েছে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গা পৌলী এলাকা। ভয়াবহ ধ্বংসের মুখে পড়েছে পরিবেশ। বিষাক্ত বর্জ্যের ধোঁয়া ছড়াচ্ছে পমিজান মেটাল নামের একটি ব্যাটারি ফ্যাক্টরি। কারখানা থেকে নির্গত এসিড মিশ্রিত তরল বর্জ্য, সিসা যুক্ত ছাই ও ধোঁয়া দুর্বিষহ করে তুলেছে অত্র এলাকার হাজার হাজার মানুষের জীবন। এমনকি জীববৈচিত্রের ওপর ও পড়ছে ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রভাব।
এলাকাবাসী জানায়, বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে কারখানার আশ-পাশের জমিতে ফসল হয়না। এমনকি গাছে ফল ধরে না এবং পুকুরে মাছ ও বাঁচতে পারেনা। উড়ন্ত ছাই ও ধোঁয়ার কারণে অত্র এলাকার প্রায় বাড়িতেই চোখের অসুখ, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ লেগেই থাকে। এছাড়াও আশে-পাশে থাকা দিনমজুর শ্রমিকরা বলেন, তারা ঠিক মতো শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারেন না যখন ব্যাটারি ফ্যাক্টরির কালো ধোঁয়া বের হয়। নারী, শিশু ও জমিতে কাজ করা শ্রমিকরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। দূষণের কবল থেকে রেহাই পেতে এলাকাবাসী কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে এলাকাবাসীর কথা কর্ণপাত করেনি ফ্যাক্টরই কর্তৃপক্ষ।
পৌলী গ্রামের মৃত.কানুশির ছেলে ওয়াজেদ জানান, কারখানার সাথে আমার ৪৬ শতাংশ জমি আছে সেখানে ধান রোপণ করতাম কারখানা হওয়ার পর কোন শস্য আবাদ হচ্ছে না কারখানার দূষিত ধোঁয়া সব পুড়ে যাচ্ছে। জমিতে কাজ করার সময় শরীরে ধোঁয়া লেগে বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে শরীরে চামড়াতেও পুড়ে যাওয়ার মত কালো দা হচ্ছে।
একই এলাকার মৃত. কিতাব আলীর ছেলে আসর বলেন, আশ-পাশের বাড়ি ঘরের টিন ফোটা হয়ে পড়ছে, আম, জাম, পেঁপে, নারিকেল এবং সবজি গাছে কোন ফুল ফল থাকছে না ঔ কারখানার উড়ন্ত বর্জ্যে দূষিত ধোঁয়ার কারণে।
মহেলা গ্রামের ছালাম জানান, কারখানাটির যখন চালু থাকে ঔ ধোঁয়া শ্বাস প্রশ্বাস নাকের ভিতরে জ্বালাপোড়া করে এজন্য মানুষের অনেক অসুখ দেখা যাচ্ছে।
মশাজান গ্রামের নাছির উদ্দীন বলেন, কারখানা হওয়ার পর থেকে আশ- পাশের এলাকায় ফসল ঠিক মত হচ্ছে না। কারখানাটি এভাবে চলতে থাকলে এলাকার জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হবে না।
অভিযোগকারী দক্ষিণ পৌলি গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে রুবেল মিয়া জানান, কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয় কারখানাটিতে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার জন্য ব্যাটারি তৈরি করা হবে। কিন্তু তারা ব্যাটারি তৈরী না করে পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা বের করা হচ্ছে। একারণে শুরুতেই কারখানার তরল ও উড়ন্ত বর্জ্যে দূষিত হতে থাকে পরিবেশ। যার ফলে এলাকায় কৃষি জমিতে শস্য উৎপাদন হচ্ছে না। চারা গাছ গজানোর শুরুতেই দূষিত ধোঁয়া সে গুলো মরে যাচ্ছে বাসা বাড়ি টিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারখানার আশে-পাশের ছোট শিশুদের শ্বাস প্রশ্বাসে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। কারখানা থেকে ২০০ গজ পশ্চিম দক্ষিণ পৌলী বাইতুন- নূর মাদ্রাসা রয়েছে কারখানাটি চালু অবস্থায় উড়ন্ত বর্জ্যে দূষিত পরিবেশ মাদ্রাসা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কারখানা কর্তৃপক্ষর সাথে যোগাযোগ করা হলে কোন কোন কর্ণপাত করেননি। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে ৪ গ্রামের তিন শত মানুষের গণস্বাক্ষর করেন। আমি এলাকাবাসীর পক্ষে কারখানাটি বন্ধে প্রশাসনের নিকট দাবি জানাচ্ছি। দক্ষিণ পৌলী বাইতুন- নূর মাদ্রাসার পক্ষ থেকে এবিষয়ে কথা বলতে রাজি নন।
এ ব্যাপারে ব্যাটারি ফ্যাক্টরির কর্মকর্তা চাঁন মিয়া জানান, আমরা সিসা গালিয়ে ব্যাটারি তৈরি করে থাকি। আর অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানা নাই। এলাকাবাসী যাবলছে সব মিথ্যা। এছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ সব ধরণের কাগজপত্র রয়েছে বলে দাবি করেন।
এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নুর -এ – আলম সিদ্দিকী বলেন, এখান থেকে কিছু লোক সুবিধা নিচ্ছে। আবার কিছু লোক অভিযোগ করছে। কারখানার দায়িত্বে রয়েছেন যাহারা তাদেরকে বারবার অবগত করেছি জনসাধারণের কোন ক্ষতি যেন না হয়।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহাদাত হুসেইন বলেন,অভিযোগ পেয়েছি শীঘ্রই এসছিলেন কে দিয়ে ব্যবস্থা নিব।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, আমরা এর আগেও টেকনিকালিক সমস্যা কারণে ওই ফ্যাক্টরিকে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা করেছি, তারপরও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে এর সঠিক ব্যবস্থা নিব। জেলা প্রশাসক মো: কায়ছারুল ইসলাম জানান, অভিযোগটি দেখে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।