প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সফল বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া ভূঞাপুরের লাবনী

Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার ঃ প্রতিটি নারীর সফলতার পেছনে থাকে অনেক গল্প বা কাহিনী। ইচ্ছাশক্তি এবং মনোবল নারীকে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর। নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আজকের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। শত প্রতিবন্ধকতা পেড়িয়ে সফলতা পেয়েছে বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের লাবনী ঘোষ। সে এখন সফল নারী উদ্যোক্তা। সে এক কন্যা সন্তানের জননী। পড়া লেখার পাশাপাশি অবন্তি লেডিস কর্ণার এন্ড ফ্যাশন নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। জানা গেছে, লাবনী ঘোষ ১৯৯৯ সালে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার পূর্ব ভূঞাপুর এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অমূল্য ঘোষ অন্যের দোকানে কাজ করেন এবং তার মা গৃহিনী।

তারা দুই বোন। তারমধ্যে লাবনী ছোট। সে বর্তমানে টাঙ্গাইল কুমুদিনী সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের দর্শণ বিভাগের শিক্ষার্থী। লাবনী যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তখন বিয়ের চাপ ছিল পরিবার থেকে। কিন্তু সকল বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। এখন সে সরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। বছর খানেক আগে লাবনী ভূঞাপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় হতে সেলাই ও বিউটিফিকেশনের (পার্লার) প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এছাড়া সে একটি লেডিস কর্ণার নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

যার নাম দেয়া হয় অবন্তি লেডিস কর্ণার এন্ড ফ্যাশন। প্রতিষ্ঠানের নামে ফেসবুকে একটি পেইজও খুলেছে। যাতে অনলাইনে প্রতিষ্ঠানের পন্য বিক্রি করা যায়। এছাড়াও মেয়েরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী লেডিস কর্ণার থেকে পন্য ক্রয় করেন। ওই প্রতিষ্ঠানেই তিনি সেলাই মেশিনের কাজ করেন। পাশাপাশি বিউটি পার্লারের কাজ করেন। ডাক পেলেই তিনি বিয়ে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে পার্লারের কাজ করেন।

এছাড়াও সে সামাজিক কাজে জড়িত। পড়াশুনা ও প্রতিষ্ঠান চালানোর পাশাপাশি এলাকার দুঃস্থ্য নারীদের নিয়ে কাজ করেন তিনি। এই কাজে সর্বাত্মাক সহযোগিতা করেন তার স্বামী। লাবনীর স্বামী পেশায় একজন সংবাদকর্মী। তার এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সেলাই ও পার্লারের কাজ করে সংসার চালানোার পাশাপাশি পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কর্মঠ এই নারী আর্থিক সহায়তার অভাবে পার্লার গড়ে তুলতে পারছেন না। এছাড়া টাকার অভাবে তার লেডিস কর্ণারে পর্যাপ্ত মালামাল তুলতে পারছে না। সরকারি সহায়তা বা সহজ শর্তে ঋণ পেলে আরো এগিয়ে যাবেন বলে প্রত্যাশা লাবনীর। লাবনী ঘোষ জানায়, একদিকে স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার চালানো অন্যদিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য।

তারপরও জীবন যুদ্ধে টিকে আছি। ৩০ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে টাঙ্গাইলে কলেজে যেতে হয় ক্লাশ করতে। আবার একমাত্র সন্তানকেও সময় দিতে হয়। প্রতিষ্ঠানে যখন যাই তখন ছোট মেয়েটাকেও সাথে নিতে হয়। ব্যবসা গড়ে তুলতে অর্থায়নই নারীদের ব্যবসার বড় বাঁধা। ব্যাংকগুলো সহজে ঋণ দেয় না, এ কারণে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় নারী উদ্যোক্তাদের। সহজ শর্তে ঋণ ও নারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা দেয়ার আহ্বান তার। লাবনীর মা গীতা রানী বলেন, লাবনী ছোট বেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিল। সংসারের প্রতি তার দায়িত্ব ছিল।

সে অন্যের প্রতি নির্ভলশীল না থেকে নিজে কিছু করার চেষ্টা করবে। নিজ প্রচেষ্টায় লাবনী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণসহ একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তার দেখাদেখি অনেক মেয়েরাও আগ্রহ দেখাচ্ছে। লাবনীর স্বামী অভিজিৎ ঘোষ বলেন, সংসার এবং সন্তানকে সময় দেয়ার পরও সে যেভাবে কর্মজীবন চালিয়ে যাচ্ছে সেটা খুবই কঠিন ব্যাপার। স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সে অনেক পরিশ্রম করেছে। গড়ে তুলেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখন সে সফল একজন উদ্যোক্তা। তার উপার্জনের টাকা দিয়ে পড়াশুনার খরচ চালাচ্ছে। আবার সংসারেও ব্যয় করছে।