বাসাইল প্রতিনিধি ঃ টাঙ্গাইলের বাসাইলে দাপনাজোর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্টের আলোচিত সেই গেট অপসারণের কোন উদ্যোগ নিচ্ছেনা কতৃপক্ষ। ফলে এর পাশে অবস্থিত মার্থা লিন্ডষ্ট্রম নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টির ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে এ ধরনের রিসোর্ট গড়ে উঠার কারনে দিনদিন ছাত্রীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ দিয়ে রিসোর্টে বেড়াতে আসা শতশত মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করছে। বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রিসোর্টে আসা যানবাহন পাকিং করায় পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও রিসোর্টে বেড়াতে আসা উঠতি বয়সী তরুন-তরুনীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের অশ্লীল আচর-আচরনে এখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়ে পড়তে আসা ছাত্রী ও শিক্ষকরা। এসব কারনে অভিবাবকরাও এখন আর মেয়েদেরকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাচ্ছেননা।
এ অবস্থা থেকে বালিকা বিদ্যালয়টিকে রক্ষা করতে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিসসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তর থেকে কতৃপক্ষের কাছে রিসোর্টের গেট সরিয়ে নিতে বার বার চিঠি দেয়া হলেও রিসোর্ট কতৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছেনা। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে কতৃপক্ষ তাদের রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টি গত ১২ ডিসেম্বর সোমবার অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য জেলা প্রশাসক ও আইনশৃংখলা কমিটির সভাপতি জসীম উদ্দীন হায়দারের দুষ্টি আকর্ষন করেন। এখনো আলোচিত গেটটি অপসারন না করায় ক্ষোব প্রকাশ করেন তারা।
জানা গেছে, বালিকা বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখ থেকে রিসোর্টের গেট সরিয়ে নিতে এবং রিসোর্টের নিজস্ব গেট নির্মান করার জন্যে গত ২১ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যান শাখা থেকে রিসোর্ট কতৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। সহকারী কমিশনার মোঃ আতাউর রাব্বী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো রাখার সুবিধার্থে ও আইনশৃংখলা সুষ্ঠু রাখার নিমিত্বে ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্ট এন্ড স্পা এর নিজস্ব গেট নির্মান করে রিসোর্ট পরিচালনা করার জন্যে নির্দেশ দেয়া হলো। এতে বলা হয়, মার্থা লিন্ডষ্ট্রম নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্টের মালিক রিসোর্টে প্রবেশ ও বাহিরের জন্যে পৃথক কোন গেট নির্মান করেনি।
রিসোর্টে প্রবেশের ও বাহিরের জন্যে বর্তমানে যে গেট ব্যবহার হচ্ছে ওই গেটটি মার্থা লিন্ডষ্ট্রম নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্যে আগে থেকেই নির্মান করা হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে রিসোর্টের মালিকের কাছে লিখিত পত্র পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে জেলা শিক্ষা অফিসের তদন্ত পরবর্তী প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা, বাসাইল উপজেলার দাপনাজোর গ্রামে মার্থা লিন্ডষ্ট্রম নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবেশ এবং বাসাইল ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্টের মালিক রিসোর্টে প্রবেশের জন্যে একই গেট ব্যবহার করায় শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যপারে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্যানুযায়ী রিসোর্টে প্রবেশের জন্যে ব্যবহৃত গেটটি রিসোর্ট কতৃপক্ষের নয়, এটি বিদ্যালয় কতৃপক্ষের।
সে কারনে রিসোর্ট তাদের নিজস্ব জায়গায় প্রবেশপথ ও গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা করলে সমস্যার সমাধান হবে। তদন্ত প্রতিবেদন ও কাগজপত্রের আলোকে রিসোর্ট কতৃপক্ষকে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে অনুরোধ করা হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যান শাখা থেকে গত ২ অক্টোবর আরো একটি পত্র পাঠানো হয় রিসোর্ট কতৃপক্ষের কাছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ ওলিউজ্জামন স্বাক্ষারিত ওই চিঠিতে বলা হয়, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মার্থা লিন্ডষ্ট্রম নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে সম্পুর্ন ব্যাক্তিগত অর্থে ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্ট এন্ড স্পা নামে একটি নির্মান করেছেন ড. আহসান হাবিব মনসুর।
রিসোর্টের দর্শনার্থীরা যে গেট ব্যবহার করছে তা রিসোর্টের মালিকের নয়। এটি বালিকা বিদ্যালয় কতৃপক্ষ করেছে। রিসোর্টে আসা পর্যটকদের যানবাহনের অবাধ যাতায়াতের কারনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। এতে উল্ল্যেখ করা হয়, বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমান গেটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যে চলামান রেখে রিসোর্টের জন্যে ভিন্ন গেট নির্মান করা প্রয়োজন।
এছাড়াও রিসোর্ট টি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় বাউন্ডারির মাধ্যমে পৃথক ক্যাম্পাস তৈরি করে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মতামত প্রদান করেছেন। এদিকে গত ১০ অক্টোবর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা থেকে রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠি দেয়া হয়। রেভিনউ ডেপুটি কালেক্টর ফারজানা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত ওই পত্রে ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্ট এন্ড স্পা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, রিসোর্টটি ভুমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০ এর ৩২৬ ধারা লঙ্ঘন করে পরিচালিত হচ্ছে, ব্যাক্তিমালিকানাধীন জমিতে নিয়মবহির্ভুতভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে, অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের নামে কোন নামজারি নেই, প্রতিষ্ঠানটি জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ব্যাতিত জমির শ্রেনী পরিবর্তন করে বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ভুমি উন্নয়ন করও বানিজ্যিক হারে প্রদান করছেননা এবং পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অনুমতিপত্র গ্রহন করা হয়নি। এসব অনিয়মের কারনে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবেনা তার কারন দর্শানোর জন্যে সাত দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়।