বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিল্লাল হাজীর থাবা প্রশ্নের মূখে ঘাটাইলে বিএনপি

Spread the love

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ঘাটাইলের স্কুল কলেজ মাদ্রাসা সহ সকল সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরেছে ওবায়দুল হক নাসির অনুসারী উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো: বিল্লাল হোসেন ওরফে বিল্লাল হাজীর থাবা। বিএনপির প্রভাব খাটিয়ে ঘাটাইল রাম রাজত্ব চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিল্লাল হাজী। এমন পরিস্থিতিতে মুখ খুলতে শুরু করেছে নিবেদিত প্রাণ ত্যাগী বিএনপির নেতারা। তাদের দাবি বিল্লাল হাজির এসব কর্মকান্ড সাধারণ মানুষের কাছে ঘাটাইলে বিএনপিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এর মূলে রয়েছে ওবায়দুল হক নাসির। আওয়াজ উঠেছে বাসাইলের নাসিরকে ঘাটাইলে থেকে তাড়ালে বন্ধ হবে বিল্লাল হাজীর বির্তকীত কর্মকান্ড।

ঘাটাইলে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে দাবীদার ওবায়দুল হক নাসিরের নেতৃত্বে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে গঠিত হয় বিএনপির পকেট কমিটি। যে কমিটিতে রয়েছে এক পরিবার একাধিক সদস্য। স্থান পেয়েছে অযোগ্য ও নিস্কৃয়রা। শুধু তাই নয় টাকার বিনিময়ে কখনো বিএনপির রাজনিতীতে জড়িত না থেকেও পেয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদ। তা করা হয়েছে বিল্লাল হাজী ও বাছেদ করিমের নেতৃত্বে। তখন থেকেই শুরু হয়েছে নেতৃত্বের প্রভাব খাটিয়ে অর্থ উপার্জন। সরকার পতনের পর তাতের নেতৃত্বেও প্রভাব বেরেছে বহুগুন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাসির অনুসারি এক বিএনপি নেতা জানান, সরকার পতনের পর বিল্লাল হাজি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা, পরিচালনা কমিটিতে পদ দেওয়া, সারের ডিলার, খাদ্যবান্ধব চালের ডিলার, ওমেছ ডিলার, টিসিবি ডিলারের লাইসেন্স প্রদানসহ নেতা কর্মীদের নানা সুবিধা দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন অংকের টাকা আদায় করছে। তার প্রতিশ্রুতির নমুনা দেখে মনে হয় সর্ব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তিনি।

এখানেই শেষ নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বানানোর কথা বলে আওয়ামী লীগের কোন পদ পদবীতে নেই, অথচ কট্টর আওয়ামী লীগ সদস্য এমন ব্যক্তিদের নিকট থেকে আদায় করেছে মোটা অংকের টাকা। বিল্লাল হাজী ও পৌর বিএনপির সভাপতি নাসির অনুসারি আব্দুল বাছেদ করিমের যোগসাজশে ইউনিয়ন পর্যায়ে থেকেও বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার কথা বলে উত্তোলন করা হয়েছে টাকা। মুলত নাসির অনুসারীরা বিল্লাল হাজীর কাছে জিম্মি অবস্থায় রাজনীতি করেছে বলে অনেকের অভিযোগ।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে সাবেক প্রতি মন্ত্রী বীর মুক্তি যোদ্ধা লুৎফর রহমান খান আজাদ সভাপতি আ .খ ম. রেজাউল করিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘাটাইল উপজেলা এবং মুঞ্জুুরুল হক মঞ্জুকে সভাপতি ও ফারুক হোসেন ধলাকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় ঘাটাইল পৌর বিএনপির কমিটি। হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলনসহ দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এ দুই কমিটির অনেক নেতা মামলা হামলা এবং জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন। অথচ তাদের ঠাঁই হয়নি বর্তমান উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতে। জনশ্রুতি আছে নিজের পথের কাঁটা সরিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহম্মদ আজম খান নাসিরকে বাসাইল থেকে ঘাটাইলে পাঠিয়েছেন। ঘাটাইল এসে নাসির সকল কমিটি অযোগ্যদের দিয়ে সাজিয়েছেন। সে অযোগ্য নেতারাই বির্তকিত কর্মকান্ডে যুক্ত হয়েছেন এর অন্যতম হলো বিল্লাল হাজী। সরকার পতনের পর যার কর্মকান্ডে বিএনপির ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। যা মোকাবেলা করতে ত্যাগীদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।

সরকার পতনের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিল্লাল হাজির থাবার কারণে নাসির অনুসারি অনেক নেতা ও বিস্মিত হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাসির অনুসারি এক ছাত্রদল নেতা বলেন, বিল্লাল হাজির কর্মকান্ডে নাসির ভাইয়ের ভাবমুর্তি ক্ষন্ন হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বলতে শুরু করেছেন এমপি হলে নাসির ঘাটাইল বেঁচে দিবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাসির অনুসারি এক বিএপি নেতা বলেন, আমরা ঘাটাইলে নাসির সহেবের শক্তি বৃদ্ধিও চেষ্ঠা করছি। কিন্তু বিল্লাল হাজির বিতর্কিত কমকার্ন্ডে আমাদের সে কাজ চরমভাবে বিঘœ হচ্ছে।

আজাদ অনুসারী নেতা ঘাটাইল পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, সরকার পতনের পর ওবায়দুল হক নাসিরের পকেট কমিটি এক নেতার কর্মকান্ড মনে হয় উনি মন্ত্রী বনে গেছেন। তার এই কর্মকান্ড সাধারণ মানুষ ভালভাবে নিচ্ছে না। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ঘাটাইল বিএনপির প্রতি মানুষের ঘৃণা জন্ম নিবে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আজাদ অনুসারী নেতা আব্দুর রহিম খান দুলাল বলেন, সরকার পতনের পর নাসির অনুসারি নেতা বিল্লাল হাজি নানা বির্তকিত কর্মকান্ড করছে। সবই করছে ওবায়দুল হক নাসিরের ইন্দনে। নাসিরকে ঘাটাইল থেকে তাড়ালে বিল্লাল হাজীর বিতর্কিত কর্মকান্ড বন্ধ হবে।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম বলেন, যে মুহুর্তে দলের ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে দল। শৃঙ্খলা রক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতি অনুস্বরণ করছে। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে দখল, চাঁদাবাজি, হুমকি-ধুমকি মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি থেকে শুরু করে যে কোন ধরনের অপকর্মের বিষয়ে কাউকে ছাড় না দেয়ার কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যার আগামী দিনের রাষ্ট নায়ক তারেক রহমান। সে মুহুর্তে কারও কর্মকান্ড দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।

এদিকে ত্যাগী নেতাদের দাবি প্রায় তিন বছর ধরে ঘাটাইল বিএনপি বিভক্ত হলেও সমাধানে উর্ধ্বতন সংগঠনের নেই কোন পদক্ষেপ। ফলে সঠিক নেতৃত্বের অভাবে বিল্লাল হাজীরা নানা অসাংগঠনিক কাজ করছে। তাদের দাবি ঘাটাইল বিএনপি একটি বৃহত অংশ লুৎফর রহমান আজাদ অনুসারি। এ অংশকে দূরে রেখে ঘাটাইল বিএনপি সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। তাই আজাদ অনুসারীদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়া জরুরী। তারা বলেন, কেন্দ্র ও জেলা বিএনপি ঘাটাইলে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি গঠনে পদক্ষেপ নিলেই বন্ধ হবে বিল্লাল হাজীর বিতর্কিত কর্মকান্ড।
এ ব্যাপারে বিল্লাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কমিটিতে স্থান না পেয়ে কিছু নেতা আমার রিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। আসলে তারা যা বলছে সবই মিথ্যা ও বানোয়াট।