টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বাম চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়াতে ডান চোখটিও অন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে খায়রুল ইসলাম ও তার পরিবার।
অপরদিকে ছেলের চোখের আলো ফিরে পেতে মা খাদিজা বেগম দিশেহারা হয়েছে। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা মা বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ করছে। ।
জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে টাঙ্গাইলের মধুপুরের মির্জাবাড়ি ইউনিয়নের সাইদ আলির ছেলে খায়রুল ইসলাম।
৮০ বছরের বৃদ্ধ খাদিজা বেগমের দাবি আমার ছেলের চোখ যে অন্ধ করে দিয়েছে সেই চোখ ফিরিয়ে দিক এই বলে জর্জরিত কান্নায় ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দৈনিক কালবেলার রিপোর্টারের কাছে কথাগুলো বলছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ মা খাদিজা বেগম।
তিনি বলেন, ছেলে চোখর আলো ছাড়া কোন কাজকর্ম করতে পারবে না। ছেলের কাজকর্মর উপর এই সংসার চলতো।
যে ছেলে এক সময় আমাকে ভরণপোষণ করত। আজ সেই ছেলের জন্য আমি বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে তাকে ভরণ পোষণ করছি।
তিনি আরো বলেন, ছেলের যেদিন গুলি লাগলো সেই দিন আমার কাছে কোন টাকা পয়সা ছিল না। অন্য বাড়িতে ধার দেনা করে টাকা নিয়ে প্রথমে ময়মনসিংহ চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখান থেকে রেফাড করে ঢাকা আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করি।
সেই চিকিৎসার খরচ ধার দেনা করে চালিয়েছি। আজও সেই ধার দেনা পরিশোধ করতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন ছেলের চোখের চিকিৎসা দ্রুত যদি না করতে পারি তাহলে বাম চোখের পাশাপাশি ডান চোখটিও অন্ধ হয়ে যাবে।
তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন দ্রুত আমার ছেলেকে উন্নত মানের চিকিৎসা দিয়ে ডান চোখটি আশঙ্কা মুক্ত করা হোক।
৮০ বছরের বৃদ্ধ মায়ের কাজের মূল্য যেন খুবই কম একদিকে মহিলা মানুষ অপরদিকে বৃদ্ধ যার কারণে ঝিয়ের কাজের মূল্য খুবই কম।
৪ থেকে ৫ বাড়ি কাজ করলেই যেন হাপিয়ে যাই। তবুও ছেলের অবস্থা দেখে আমার ভালো লাগেনা। তাই আমার ছেলে, বৃদ্ধা স্বামী ও বাড়ির অন্য সদস্যদের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ করতে যাই।
আমার নিজের শরীরে অনেক সমস্যা একদিকে চোখেও কম দেখি অপরদিকে মাজার ব্যথা। তবুও প্রতিনিয়তই কাজে বের হই।
তাই দেশের বিত্তশালীদের এবং সরকারের কাছে আবেদন চোখে গুলিবিদ্ধ খায়রুলের পরিবারকে সহায়তার হাত বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি ।
চোখে গুলিবিদ্ধ খায়রুল ইসলাম বলেন, পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ চোখ নিয়ে প্রথমে ময়মনসিংহ চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখান থেকে ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতাল রেফাড করেন। এরপর সি এম এস এ দীর্ঘদিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডাক্তার বলেছে বাম চোখ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নাই। এরপর ডান চোখটি সার্জারি করে মার্বেল বসানো হবে তাতে নাকি ডান চোখটি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন আমার চিকিৎসা সরকার ফ্রি করে দিয়েছি কিন্তু আমার চিকিৎসা বাবদ যোগাযোগের যে খরচ সেটিই তো আমি জোগাড় করতে পারছি না।
এছাড়াও আবার বাড়িতে যে ওষুধ কিনতে হয় সেই ওষুধের অর্থ আমি জোগাড় করতে পারি না। প্রথমে আমাকে দু-একজন যথসামান্য সহায়তা করেছিল। সেই সহায়তা পেয়ে আমি খুশি হয়েছিলাম কারণ আমার সংসারের সদস্যদের আহারের একটি ব্যবস্থা হয়েছিল। রাজমিস্ত্রি কাজ করে সংসার চালাই। সংসারের অভাব অনটনের কারণে পড়াশোনা করতে পারিনি।
আমার মা বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালায়। এতে সংসার চালান বড়ই কষ্ট হচ্ছে। সংসারের সদস্য মেম্বার পাঁচজন এদেরকে ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালন করছেন আমার ৮০ বছরের বৃদ্ধ মা।
তিনি আরো বলেন এখন আর আগের মত বন্ধুদের সাথে খেলাধুলাসহ নানা ধরনের আড্ডায় মেতে উঠতে পারছি না। আগে কি সুন্দর জীবন ছিল সেই জীবনের কথা চোখ হারিয়ে এখন যেন পড়তে পড়তে মনে করছি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র অন্দোলনকারী এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ মধুপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মো, একরামুল খান অনিক বলেন, আমাদের সাথে বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চোখে গুলিবিদ্ধ খায়রুল গত আগস্ট মাসজুড়ে অদ্যবধি ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় মধুপুরের বাস স্ট্যান্ড এলাকায় গত১৮আগস্টে অংশগ্রহণ করে। সেই দিন বাসস্ট্যান্ডের আনারস চত্বরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করেন। সেইগুলিতে খায়রুলের চোখ অন্ধ হয়ে যায়।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মধুপুর উপজেলা শাখার সদস্য মো. সবুজ মিয়া, বলেন খায়রুল ইসলাম একজন রাজমিস্ত্রি। তিনি রাজমিস্ত্রি হলেও তার বন্ধু সবাই ছাত্র। তার সংসারের অভাব অনটনের কারণেই পড়াশোনা করতে পারনি। তার চলাচল সব সময় ছাত্র বন্ধুদের সাথে। সেই কারণেই তার বন্ধুদের সাথে ছাত্র আন্দোলনে নিয়মিত শরিক ছিলেন। বর্তমানে তিনি খেয়ে না খেয়ে দিনপাত করছেন। তাকে উন্নত মানের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। সেই সাথে তাকে পূর্ণবাসনেরও দাবি করছি।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো, জুবায়ের হোসেন বলেন, খায়রুল ময়মনসিংহ, ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতাল ছাড়াও সি এম এস এ ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ।
তাতে যতটুকু চিকিৎসা পেয়েছে তাতে বাম চোখটি আলো ফিরে পাইনি অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে বাম চোখ অন্ধত্ব বরণ করছে। অপর আরেকটি ডান চোখ শঙ্কায় রয়েছে।
তিনি আরো বলেন যদি তার জন্য বিদেশে কোন চিকিৎসার সুযোগ থাকে সেটি যথাযথ চেষ্টা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।