কোরবান আলী তালুকদার ঃ টাঙ্গাইলের ভঞাপুরের যমুনা চরাঞ্চলে গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে দেড় গুণ বুদ্ধি পেয়েছে ভুট্টার চাষ। বন্যা পরবর্তী সময়ে যমুনার বুকে জেগে উঠা বালুচরে ভুট্টা চাষ করেছে এখানকার কৃষকেরা। চলতি বছরের বন্যায় উপজেলার অর্জুনা, গাবসারা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইলে চরাঞ্চল সহ সব কয়টি ইউনিয়নের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার এই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে যমুনার বুকে জেগে উঠা বালুচরে ভুট্টা চাষ করেন ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষক। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতি বছর ভুট্টার চাষ করেন কৃষকরা। ভুট্টা চাষীদের মাঝে বিনামূল্যে উন্নত মানের ভুট্টার বীজ ও সার বিতরণ করেছেন উপজেলা কৃষি অফিস।
কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি সম্প্রসারণ অফিসাররা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। ভুট্টা চাষ অত্যন্ত সহজ ও লাভজনক। তাছাড়া অন্যান্য ফসলের মতো সার ও সেচের তেমন প্রয়োজন হয়না। হাট-বাজার গুলোতেও চরাঞ্চলের অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টার চাহিদা ও দাম অনেক বেশি। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, গত বছর উপজেলায় ২ হাজার ১’শ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরে এর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে।
উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের ভুট্টা চাষি আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার, শফিকুল ইসলাম, মিল্টন তালুকদার, ফজলুল হক, শহিদুল ইসলাম বলেন- এবছর বন্যায় আমাদের বীজতলা, সবজি ক্ষেত সহ সকল ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে আমরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হই। আর এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যা পরবর্তী সময়ে যমুনার বুকে জেগে উঠা চরে আমরা ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম ও লাভ অনেক বেশি। আশা করি ভুট্টা চাষ করে বন্যার ক্ষতি অনেকটাই আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো। রামপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি আনেয়ার হোসেন বলেন, এখানকার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ার আমাদের চরাঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়। এবছর আমি পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। আশা করি বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ ফলন পাবো। গত বছর চরাঞ্চলে ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় এবছর আরো অধিক জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। আমার দেখাদেখি যারা অন্য ফসল চাষ করতো তারাও এবছর ভুট্টা চাষ করেছে।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, আমাদের যমুনা চরাঞ্চলের বালিমাটি ভুট্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বন্যা পরবর্তী সময়ে এখানকার কৃষকরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ভুট্টা চাষ করেন। বাজারে ভুট্টার ভালো দাম পাওয়ায় প্রতিবছর কৃষকদের মাঝে ভুট্টা চাষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছরে উপজেলার চরাঞ্চলে ভুট্টার আবাদ দেড় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর উপজেলায় ২ হাজার ১’শ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরে এর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।