মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীকে স্বাধীনতা পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

Spread the love

যুগধারা ডেস্ক :

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) বীর বিক্রমের হাতে স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় এই বেসামরিক পুরস্কার তুলে দেন।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর বুকে কাঁপন ধরানো দুর্ধর্ষ গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম। এই গেরিলা দলের নানামুখী কর্মকাণ্ডের কারণে বিশ্ব জানতে পারে, স্বাধীনতা চায় বাংলার জনগণ। চায় স্বাধীন ভূখণ্ড।

১৯৪৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুরের সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে জন্ম নেয়া মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই ছিলেন  এদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত, শোষিত মানুষের পক্ষে সোচ্চার।  
তার পিতা মরহুম আলী আহসান মিয়া এবং মাতা মরহুমা মোসা. আক্তারুন্নেছা।

শিক্ষাজীবনে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মিউজিক কলেজ থেকে আই মিউজিক পাশ করেন। এছাড়া জগন্নাথ কলেজ থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর আইনশাস্ত্রে পড়াশোনা করে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির  প্রতি অদম্য টান তাঁকে ছাত্ররাজনীতির প্রতি উৎসাহী করে তোলে। বিশেষ করে পাকিস্তান আমলে এদেশের মানুষের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়-অবিচার তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই দেশের স্বাধীনতা ও গণমানুষের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালে জড়িয়ে পড়েন ছাত্ররাজনীতিতে। 

ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, ’৭১-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের স্বাধীনতার উদ্দাত্ত ডাক, ’৭১-এর মুক্তিসংগ্রাম – বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তনের প্রতিটি বাঁকে তিনি ছিলেন সক্রিয় কর্মী-যোদ্ধা-নেতা। ছিলেন জাতির পিতার আস্থাভাজন।

১৯৭১ সালে মোফাজ্জল হোসেন মায়া চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধকালীন ২নং সেক্টরের ক্র্যাক প্লাটুনের কমান্ডার হিসেবে বীরত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর এই গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে দিয়ে সম্মানিত করে বাংলাদেশ সরকার। 

মুক্তিযুদ্ধের পর বিধ্বস্ত দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন নতুন এক যুদ্ধে, এ যুদ্ধ উন্নয়নের যুদ্ধ। 

১৯৭৫ সালে যখন জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, তখন বন্দি করা হয় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ আওয়ামী লীগের অনেক নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিককে। তাঁদের রাখা হয় পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে তৎকালীন কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে বন্দি অবস্থায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সাক্ষী হন ৩ নভেম্বরের নির্মম জেলহত্যাকাণ্ডের। শুধু ’৭৫ই নয়, তিনি সাক্ষী হয়ে আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড ছুড়ে হত্যাচেষ্টারও। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক জনসভায় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘাতকচক্র গ্রেনেড হামলা চালায়। সে সময় খোলা ট্রাকে স্থাপিত মঞ্চে মায়া চৌধুরী ছিলেন নেত্রীর পাশে। যখন হামলা শুরু হয়, তখন অনেক নেতা বাঁচার জন্য ট্রাক থেকে নেমে গেলেও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরো কয়েকজন মানবঢাল রচনা করে রক্ষা করেন জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে। তাঁদের সে জীবন বাজি রাখা অকুতোভয় প্রচেষ্টার জন্যই আজ বাংলাদেশ পেয়েছে এক সফল রাষ্ট্রনায়ককে।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালে চাঁদপুর-২ আসন থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৭ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে ২০১৪ সালে তাঁকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির যে কোনো সংকটকালে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীদের অন্যতম মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।

যুগধারা ডট টিভি/অন্তু