জুয়েল রানা ঃ স¦াধীনতার ৫১ বছর পরেও পূর্ণতা পায়নি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বহেড়াতৈলে মুক্তিযুদ্ধের শপথের সেই ঐতিহাসিক স্থানটি। অযতœ-অবহেলায় পড়ে আছে। ওই স্থানটির উত্তর-পশ্চিম পাশ ঘেঁষেই রয়েছে গণকবর। গণকবরটিও অরক্ষিত এবং অবহেলিত। ওই স্থানটিতে ১৯৭১-এর ১০ জুন ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ এর নেতৃত্বে ছয়টি কোম্পানীর অধীনে ছয় শতাধিক যুবক কোরআন, বাইবেল ও গীতা ছুঁয়ে দেশ স্বাধীনের ‘শপথ’ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য ‘বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম’ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ধরে রাখতে ওই স্থনটিকে ‘শপথস্তম্ভ ও মুক্তিযুদ্ধের যাদুঘর’ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। নির্মাণকাজের ২৬ বছর পার হলেও পূর্ণঙ্গতা পায়নি শপথস্তম্ভের মূল পরিকল্পনা।
আলোর মুখ দেখেনি মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘর কমপ্লেক্স। ওই সময় কমপ্লেক্সটিতে বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নিদর্শন স্মারকচিহ্ন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন, সব ধরনের তথ্য-প্রমাণাদির নিদর্শন এবং রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে নির্মিত যাদুঘরে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক শপথস্তম্ভের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবোধ জাগ্রত করাসহ একটি দৃষ্টি নন্দিত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনাও ছিল এখানে। সরেজমিন সোমবার গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বহেড়াতৈল বাজারের পাশে টিলার উপর সবুজ ঘাস ও বৃক্ষের বৃত্তায়নের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে চার ফলক বিশিষ্ট শপথস্তম্ভ। শপথস্তম্ভটি নিয়ে নতুন প্রজন্মের কৌতুহলের শেষ নেই।
কেউ ছবি তুলছে। কেউ কেউ স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইছে এর ইতিহাস। সম্প্রতি জেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তায় স্তম্ভটির চারপাশে পাকা দেয়াল নির্মাণ করে শপথস্তম্ভের পবিত্রতা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ফলকের পশ্চিম-উত্তর চত্বরে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর। সেটিও অরক্ষিত। স্বাধীরতার পর থেকে চার ফলক বিশিষ্ট শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্তম্ভের স্থানটিও ছিলো নিচিহ্ন। ১৯৯৬ সালে ‘বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী’ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে জেলা পরিষদের অর্থায়নে শপথস্তম্ভটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ১৯৯৮ সালে পরিকল্পনার অর্ধনির্মিত শপথস্তম্ভটি উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওই সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ শপথস্তম্ভটি উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর মতবিরোধ দেখা দেয়।
ফলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-বিজড়িত শপথস্তম্ভটি আর উদ্বোধন হয়নি। এরপর দুই যুগ অতিক্রান্ত হলেও পরিকল্পনার বাকি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের আহবায়ক জাহিদ ইকবাল জাহাঙ্গীর বলেন, নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখতে মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘর কমপ্লেক্স নির্মাণ, শপথস্তম্ভটির আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। দ্রুত কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কাদেরিয়া বাহিনীর হেড কোয়ার্টার বহেড়াতৈল অঞ্চলের কোম্পানী কমান্ডার প্রশিক্ষক (সম্মুখযোদ্ধা) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মতিয়ার রহমান বলেন, আমি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে পালিয়ে ৪-৫দিন পায়ে হেঁটে বহেড়াতৈল চলে আসি। ১০ জুন কাদেরিয়া বাহিনীর নেতৃত্বে বহেড়াতৈলে পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে শপথ নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। আমি দ্রুত শপথস্তম্ভ, গণকবরের সংস্কার এবং মুক্তিযুদ্ধের যাদুঘর নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের প্রশাসক ইউএনও ফারজানা আলম বলেন, যখন শপথস্তম্ভটি করা হয়েছে নিশ্চয়ই একটি পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। সে পরিকল্পনা ঠিক রেখে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালায় যাতে কাজ করে তার জন্য একটি পত্র প্রেরণের সিন্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। সার্ভের কাজ শেষ হলেই মন্ত্রণালায়ে আমরা পত্র প্রেরণ করবো। দর্শণার্থীদের জন্য দ্রুত আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে ওঠে, এজন্য ইতিমধ্যে পর্যটন করর্পোরেশনকেও অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, জেলা পরিষদের অর্থায়নে শপথস্তম্ভের পাশে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও চারপাশে পাকা দেয়াল করে দেওয়া হয়েছে। শপথস্তম্ভটি পরিদর্শন করে দ্রুতই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।