যুগধারা ডেস্ক :
দেশে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, এমন সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সচেতন থাকার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের সমালোচনা থাকবে, তবে তা গঠনমূলক হতে হবে। সমালোচনা হতে হবে দেশের কল্যাণে, ক্ষতির জন্য যেন না হয়। গণমাধ্যমের যতটা স্বাধীনতা আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে তা কখনও কেউ দেয়নি। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনায় আপত্তি নেই।
সোমবার (১০ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের করবী হলে সাংবাদিকদের অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অসুস্থ, অসচ্ছল সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে আর্থিক সহায়তা ভাতা বা অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠন করার সময় সংবাদপত্র ছিল হাতেগোনা কয়েকটি। তখন অবাধে সংবাদ যাতে প্রকাশিত হতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। প্রথমে তিনটি প্রাইভেট চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি, তারপর এটি বাড়ানো হয়েছে। সেই সময় অনেকে বাধা দিয়েছিল যে, প্রাইভেটে টিভি চ্যানেল দেওয়া ঠিক হবে কি না? আমি যখনই যে কাজ করেছি সেখানে লক্ষ্য ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
তখন আমি বলেছিলাম, যত বেশি টেলিভিশন দিতে পারব সেখানে সাংবাদিক থেকে শুরু করে বহু ধরনের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সাংবাদিক, শিল্পী, টেকনিশিয়ানসহ বহু ধরনের মানুষ কাজ পাবে তাদের জীবন চলতে পারবে। সেভাবে আমরা টেলিভিশনটা উন্মুক্ত করে দেই।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরে দেশে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের যাত্রা শুরু হয়েছে। সাংবাদিকরা যাতে কিস্তিতে ফ্ল্যাট কিনতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সাংবাদিকরা অসুস্থ কিংবা কোনো দুর্ঘটনায় আহত হয়ে থাকে, আবার কেউ কর্তব্য পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে পরিবারগুলো যেন একটা সহযোগিতা পায় সে কথা চিন্তা করে প্রথমে একটা কল্যাণ তহবিল করা হয়; তারপর একটা ট্রাস্টায়ন করে দিই। তহবিল করলে যে সেটা সব সময় থাকবে সেটা না, আবার কাজেও আসে না। ট্রাস্ট সুরক্ষা দেয়, সেটা মাথায় রেখেই এই ট্রাস্টায়ন করে, তারপর আমি সিড মানিটাও দিয়ে দিয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘তারপর আমাদের বেশকিছু টেলিভিশনের মালিক, পত্রিকার মালিক অনেকেই তো আছেন অর্থশালী-সম্পদশালী, তাদের বলেছিলাম কিছু টাকাপয়সা অনুদান দিতে। যাক সেখানেও পাওয়া গেছে, টাকাপয়সা বেড়েছে কিছুটা। তবে অনেকেই দেয়নি।’এ সময় যারা অনুদান দেয়নি তাদের আবারও অনুদান দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য কাজ করার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেককেই প্লট দেওয়া হয়েছে এবং অনেকে পেয়ে বিক্রিও করে দিয়েছে। কিন্তু এভাবে না দিয়ে সরকারিভাবে আমরা অনেক ফ্ল্যাটও তৈরি করে দিচ্ছি। প্রথমে অল্প কিছু টাকা জমা দিয়ে, কোনোটা ১৬ বছর আবার কোনোটা ২৬ বছর পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করে সেটার মালিক হওয়া যায়। সেটা যদি সাংবাদিকরা চান, সেটা আমরা দিচ্ছি।’
এ ছাড়া কেউ যদি গ্রামে গিয়েও বাড়ি করতে চান তাহলে সরকার সহায়তা করবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সংবাদপত্রে যারা কর্মরত সাংবাদিক, কর্মচারী বা প্রেসশ্রমিক রয়েছেন তাদের কল্যাণে আমরা ইতোমধ্যে একটা ওয়েজবোর্ড কার্যকর করেছি। যেহেতু এখানে বেসরকারি খাতটাই সব, এটা নির্ভর করে অনেকটা মালিকদের ওপর। তারপরও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং এটা বাস্তবায়ন করা হবে। আর আপনাদের কল্যাণে গণমাধ্যমকর্মী আইন, চাকরির শর্তাবলি আইন সেটাও আমরা প্রণয়ন করে দেব।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও একসময় সাংবাদিকতা করেছেন। তার আত্মজীবনী পড়লে আপনারা সেটি জানতে পারবেন। শুধু সাংবাদিকতা নয়, পত্রিকা বিক্রির কাজও তিনি করেছেন। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে আমি আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরাই বেসরকারি খাতের জন্য বিশেষ আইন করে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে অল্প সময়ের মধ্যে ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিলাম। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে দেখি সেখান থেকে কমে ৩৮০০ মেগাওয়াট হয়ে গেছে। সেখান থেকে আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পেরেছি। আমরা যদি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা না নিতাম তাহলে চিন্তা করে দেখেন সেটা ৩৮০০ মেগাওয়াটে থাকত। হয়ত ১০০-২০০ করে বাড়ত। এখনো অনেকে অনেক সমালোচনা করে।
আমি মনে করি সেই সমালোচনাটা গঠনমূলক হওয়া উচিত। শুধু বলার জন্য বলা না। বিরোধীদল তো বলবেই, তারা সারাদিন কথা বলে, টক শো করে, টক শোতে ইচ্ছেমতো বলে যাচ্ছে, যা খুশি তাই বলে যাচ্ছে, কথা বলার পরে বলবে কথা বলার স্বাধীনতা দেয়নি। স্বাধীনতা ছিল কখন? আইয়ুব খানের আমলে ছিল? জিয়াউর রহমানের আমলে ছিল? এরশাদের আমলে ছিল?
তিনি বলেন, ২০০১ সালের কথা একবার চিন্তা করেন, খালেদা জিয়া যখন প্রথম সরকারে এলো, দক্ষিণাঞ্চলে কি কোনো সাংবাদিক যেতে পেরেছিল? কোনো সাংবাদিক যেতে পারেনি। সেখানে এত অত্যাচার করেছিল। সাংবাদিক নিষিদ্ধ ছিল। তাদের অপকর্ম কোনো পত্রিকা লিখতেই পারত না। যে লিখত তাকে খেসারত দিতে হত। তখন স্বাধীনতাটা ছিল কোথায়? যতটা স্বাধীনতা আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে, গত চৌদ্দ বছর সাংবাদিকরা যতটা স্বাধীনতা পেয়েছে, এই স্বাধীনতা কখনো কেউ ভোগ করেনি। সমালোচনা যেন আমাদের দেশের কল্যাণে হয়, দেশের ক্ষতির জন্য না হয়। আমাদের দেশে কিছু বুদ্ধিজীবী আছে, যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে।
পরে অসুস্থ, অসচ্ছল সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।