স্টাফ রিপোর্টার:
আদালতে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক সহিদুর রহমান খানকে আটক করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খানকে (মুক্তি) আটক করেছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল আদালতে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে আটক করা হয়।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সহিদুর রহমান খানকে টাঙ্গাইল সদর থানায় নেওয়া হয়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহম্মদ বলেন, আটক সহিদুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সহিদুর রহমান খান টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে এবং একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খানের ভাই।
আদালত সূত্র জানায়, ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় সহিদুর রহমান গত ২২ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত থেকে জামিন পান। পরে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। আজ মামলার ধার্য তারিখে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে আদালতে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, হাজিরা শেষে দুপুর ১২টার দিকে হুইলচেয়ারে করে আদালত কক্ষ থেকে তাঁকে বের করা হয়। এ সময় আদালত চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। পুলিশ আগেই সহিদুরকে বহন করে আনা অ্যাম্বুলেন্সটি আদালত ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। পরে সহিদুর আবার আদালতকক্ষে ফিরে যান। বেলা সোয়া তিনটার দিকে তিনি আবার হুইল চেয়ারে আদালতকক্ষ থেকে বের হন। আদালত চত্বর থেকে বাইরে আসার পর সদর থানা-পুলিশের একটি দল ঘিরে ধরে পুলিশের আনা মাইক্রোবাসে উঠতে বলে। সহিদুর গ্রেপ্তার করা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে পুলিশ তাঁকে আটকের কথা জানায়। কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে জিজ্ঞাসা করলে ওসি তানভীর তাঁকে বলেন, ‘আমাদের সাথে চলেন, সব জানানো হবে।’
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় সহিদুরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এরপর তিনি আত্মগোপন করেন। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠান আদালত। পরে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জামিন পেলেও সেই জামিন বাতিল করে আদালত। এরপর ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে ২২ নভেম্বর কারামুক্ত হন তিনি। পরে আদালত তাঁর জামিন বাতিল করলে পরদিনই আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যান। গত ২৮ আগস্ট তিনি আবার জামিন পান।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ। ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশ হত্যায় জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে তাঁদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ও তাঁর তিন ভাই জড়িত বলে বের হয়ে আসে। পরে ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এতে সহিদুররা চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে আছে।
অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান জানান, মামলাটির শুধু তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। অন্য সব সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।