অর্ণব আল আমিন ঃ
মানুষের পাশে থেকে, তাদের সাথে নিয়ে শতভাগ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে আমি মেয়র হয়েছি। পৌরবাসী আমাকে ভালোবাসে বলে মেয়র নির্বাচিত করেছে। আমার লক্ষ্যই হচ্ছে পৌরসভাকে একটি সুন্দর-পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তোলা। পৌরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করে যেতে চাই। পৌরসভার নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে একটি মডেল পৌরসভায় রূপান্তর করতে চাই। যা জেলায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমি বিশ্বাস করি একজন মেয়র চাইলে একটি পৌরসভাকে বদলে দেয়া সম্ভব। যুগধারার সাথে একান্ত স্বাক্ষাতকারে বাসাইল পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম আহমেদ এসব কথা বলেন।
টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার পূর্বে বাসাইল পৌরসভার অবস্থান। ৬ টি মৌজা ও ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ খ শ্রেনীর পৌরসভাটির যাত্রা শুরু। এর আয়তন ১৬.৩৪ বর্গকিমি.।
এ পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ১৯৩৯৬ জন।এর মধ্যে পুরুষ ৯৪১৮ ও মহিলা ৯৯৭৮ জন।
ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৪০০। এর মধ্যে নারী ভোটার ৮ হাজার ৪৭৫ জন এবং পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ৯২৫ জন। শিক্ষার হার ৬৩ শতাংশ।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ জুন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে ৪৭৬০ ভোট পেয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থী এনামুল করিম অটলকে ৮১৫ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন আব্দুর রহিম আহমেদ। এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় সাড়ে চার বছর।
অনেক চড়াই- উৎরাই পেরিয়ে তিনি এ পর্যন্ত এসেছেন। তার বাড়ি বাসাইল পৌর এলাকার থানাপাড়ায়। ১৯৫৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা হাজী রবিউল্লাহ ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী।
পারিবারিক জীবনে তিনি সুলতানা রাজিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার ছেলে শাহরিয়া আহমেদ সিজন ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এবং মেয়ে রিফাত জেরীন রুমা ফার্মাসিস্ট হিসেবে নর্দান আইয়ারল্যান্ডে কর্মরত রয়েছেন ।
দেশী বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছেন। তার কর্মের উপর ভিত্তি করে পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনৈতির সাথে সম্পৃক্ত হন। হাইস্কুলে পড়া অবস্থায় ১৯৬৮-১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ বাসাইল গোবিন্দ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭২-৭৪ সালে বাসাইল ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৭২-১৯৭৫ সালে বাসাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৭-১৯৭৯ সালে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৮-১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিম উদ্দিন হল ছাত্রলীগ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৭-১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাসাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে বাসাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি সকল বাধা-বিপত্তি প্রতিরোধ করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। এছাড়া বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তিনি অগ্রনী ভূমিকা রাখেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে তিনি সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে মাটি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।
আব্দুর রহিম আহমেদ ১৯৮৫-৮৭ সাল পর্যন্ত বাসাইল এমদাদ হামিদা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৩ সাল থেকে তিনি বাসাইল উপজেলা শ্রমিক ফেডারেশনের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৪ সাল থেকে বাসাইল বনিক সমিতির সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাসাইল থানাপাড়া জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং ২০১০ সাল থেকে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৫-২০২১ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কবরস্থানের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, রোবার স্কাউটের আজীবন সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য, শাহ সূফী নব্বেস চাঁন পাগল দরবার শরীফের সভাপতি, বাসাইল উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি, থানা পাড়া দুর্বার সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ১৯৮৯-১৯৯১ সালে জেলা সমবায় শিল্প সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন, ১৯৯৩- ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পর্তুগালের সভাপতি, ১৯৮৯-১৯৯১ সালে জেলা সমবায় ইউনিয়নের পরিচালক, ১৯৮৯-১৯৯১ সালে পরিবেশ উন্নয়ন ও শিক্ষা সংস্থার পরিচালক, ১৯৮৯-১৯৯১ সালে ইস্টার্ণ কোঅপারেটিভ জুট মিলস্ লিমিটেডের নির্বাচিত পরিচালক হিসেবে দক্ষতা, যোগ্যতা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্যক্তিগত ভাবে তিনি ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নর্দান আইয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, ভারত, নেপালসহ অনেক দেশ সফর করেছেন।
বর্তমানে পৌরবাসীর সেবায় তিনি নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রেখেছেন। বাসাইল পৌরসভাকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠার শুরুতে বাসাইল পৌরসভায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা তেমন ছিল না। আর্থিক টানাপড়েনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাসাইলে বড় ধরনের কোনো শিল্প কারখানা নেই। ফলে পৌরসভার আয় খুবই কম। তাই আর্থিক অনেক সমস্যা আছে। এখানে হোল্ডিং ট্যাক্স, যা হয় তা-ই দিয়ে পৌরসভা চলে। পৌর এলাকাটি ছিল উন্নয়ন বঞ্চিত। বর্তমানে পৌরসভার উন্নয়ন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। চলছে মডেল পৌরসভায় রূপ দেয়ার কাজ। ইতিমধ্যেই বেশকিছু কাজ সম্পন্ন হওয়ায় পৌরবাসীর সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। বাকি কাজ বাস্তবায়ন হলে পৌরবাসী আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাবে। এখানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য গড়ে ওঠেনি ডাম্পিং স্টেশন। এখনও পুরো পৌরসভায় সড়কবাতি বসানো সম্ভব হয়নি। কাজ করে যাচ্ছি। জায়গা না পাওয়ায় পৌর পার্ক কিংবা শিশু পার্কও গড়ে ওঠেনি।
এসব বিষয়ে পৌর মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদ বলেন, নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি ছিল মডেল পৌরসভা করব। এ লক্ষ্যেই বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করছি। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই কর্মচারীদের নিয়মিত হাজিরা নিশ্চিত করেছি। ঠিকমতো অফিস করার কারণেই সবাই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।তিনি বলেন ট্যাক্স পরিশোধে সবাই সজাগ না হলে পৌরসভা মুখ থুবড়ে পড়বে, জনগণ সেবা পাবে না। এ কারণে ট্যাক্স প্রদানে সকলকে সচেতন হতে হবে।
মেয়র বলেন, ছাতা মসজিদ থেকে কাচাবাজার পর্যন্ত ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান। বেপারীপাড়া রাস্তার কাজ চলমান, ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা গনি সিদ্দিকীর বাড়ি হতে রমজান মাষ্টারের জমি পর্যন্ত মাটি ও এইচবিবি দ্বারা ৪শত ৫০মিটার রাস্তা নির্মাণ কাজ চলমান, বাসাইল দক্ষিনপাড়া হতে বাদ্যকর পাড়া পর্যন্ত আরসিসি রাস্তা, ৩ নং ওয়ার্ডের কাদের মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা, নলুয়া রাস্তা হতে কুমারজানী মসজিদ পর্যন্ত আরসিসি রাস্তা, ছাতা মসজিদ থেকে পোস্ট অফিস হয়ে প্যানেল মেয়র বাবুল আহমেদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা, ৫ নং ওয়ার্ডের রাস্তা, ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাফিজুর রহমানের বাড়ি থেকে মাইজখাড়া ব্রিজ পর্যন্ত আরসিসি রাস্তা, ৯ নং ওয়ার্ডের বর্ণীকিশোরী দক্ষিণপাড়া মসজিদ থেকে ভূইয়াবাড়ি পর্যন্ত রাস্তা, বর্ণী কিশোরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কালামের বাড়ির রাস্তা, বালিনা গুচ্ছ গ্রাম পর্যন্ত রাস্তা, ৭নং ওয়ার্ডের ব্রাক্ষনপাড়িলের রাস্তাসহ ৪০ টি রাস্তার কাজ শেষ করেছি। আরো ৩০ টা রাস্তার কাজ হাতে আছে। কয়েক মাসের মধ্যে ত্রিশ পয়ত্রিশ কোটি টাকার কাজ শুরু হবে। টেন টাউনের ১২ টি রাস্তার কাজ চলমান। আরো ২৫ কোটি টাকার কাজ প্রক্রিয়াধীন। ৮ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। বাকী টাকার টেন্ডার হবে সামনের মাসে। করোনা ও বন্যার জন্য কাজে পিছিয়েছি। আমরা দ্রুত কাজ গুলো শেষ করবো। আজ মাননীয় সংসদ সদস্য ৮ টি রাস্তার কাজের উদ্বোধন করবেন। এই প্যাকেজে ১২ টি রাস্তা রয়েছে। ২ কোটি টাকা ব্যায়ে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের সড়ক ও বাজারের মোড়ে মোড়ে শোভা পাবে সৌর বিদ্যুতায়িত সড়ক বাতি। দৃষ্টিনন্দন এসব বাতি লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে। জায়গা পেলে পাবলিক টয়লেট, লাইব্রেরী, পার্ক নির্মান করবো। মানুষের বড় চাওয়া হলো রাস্তা। আগামী নির্বাচনের আগেই সকল রাস্তার কাজ শেষ করবো এটাই আমার প্রতিশ্রুতি।
শিক্ষার মানোন্নয়ন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আধুনিক উন্নত মডেল পৌরসভা করতে গেলে শিক্ষার মান আরও উন্নত করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
পৌরসভার নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সবসময় কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য উদ্যোক্তা তৈরিতে উৎসাহ দিচ্ছেন। সেই জন্য আমরাও পৌরসভা থেকে নারী উদ্যোক্তা, স্বাবলম্বী হতে পারেন, তাদের আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দলমত নির্বিশেষে সবার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। করোনাকালের শুরু থেকেই জনসাধারণকে করোনা সম্পর্কে সচেতন করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। পৌর এলাকায় দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত এবং গরিবদের মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র বিতরণ করেছি। মশার ঔষধ ছিটিয়েছি। ঈদের মধ্যে ইদ সামগ্রী বিতরন করেছি। আমার কাছে যারা আসে সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সমস্যা সমাধান করে দিচ্ছি। বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এক বছরের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি। এর ফলে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, এ পৌরসভাকে আধুনিক ও ডিজিটাল হিসেবে গড়ে তুলতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপদ জীবন যাত্রার নিশ্চিত করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাসযোগ্য মডেল পৌরসভা গড়াই আমার লক্ষ্য। আমি বাল্যবিবাহ, মাদক, জঙ্গি-সন্ত্রাস, দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে এ পৌরসভাকে ডিজিটাল পৌরসভা হিসেবে রূপান্তরে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে একজন কর্মী হিসেবে কাজ করছি। এজন্য পৌরসভার সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি। ইনশাআল্লাহ বাসাইল বাসীকে তিলোত্তমা নগরী উপহার দিব।