সরিষার ফুলে ফুলে স্বপ্ন দুলছে কৃষকের

Spread the love

মধুপুর প্রতিনিধি ঃ চার দিকে জেকে বসেছে শীত। ফসলের ডগায় ঝরছে শিশির। চারিদিকে ভ্রমরের গুঞ্জন। হলুদ ফুলের সুবাসে চারদিক টালমাটাল। মৌ মৌ গন্ধ ফসলের মাঠে। দিগন্ত জুড়ে সরিষার ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। হলুদ ফুলে দুলছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার কৃষকের স্বপ্ন। উপজেলায় এবার সরিষা ভালো ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। সরিষাকে কেন্দ্র করে ধনবাড়ীর কৃষকেরা স্বপ্নের জাল বুনছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকের স্বপ্ন পূরণ হবে এমনটাই প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের। স্থানীয় কৃষকরা জানান, দেশে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ ভরে সরিষা চাষ করেছেন। উপজেলার বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে সরিষা খেত। মাঠে সরিষা ফুলের মনোরম দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ এবার অনেকটাই কম।

তাই কৃষকরা আশা করছেন ভালো ফলনে লাভবান হবেন। এ আশা অনেকটাই পূরণ হবে, স্বস্তি ফিরে আসবে কৃষকের প্রাণে। স্থানীয় কৃষকরা আরও জানান, আগে স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করায় ফলন কম হতো। উৎপাদনে সময়ও লাগতো বেশি। ফলে কৃষকরা তেমন লাভবান হতো না। বর্তমানে উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। স্বল্প জীবনকালের বারি-১৪ জাতের সরিষা ৮০-৮৫ দিনেই ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় মেট্রিক টন। সরিষা চাষ করে ওই জমিতে নির্বিঘেœ বোরো চাষ করা সম্ভব হয়। ফলে বারি জাতের আবাদ দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। সরিষার পাতা ফুল ফলে জৈব সার তৈরি হওয়ায়, বোরো চাষে সারও কম লাগছে। ফলনও ভালো হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের যে দিক চোখ যায়, সেদিকেই হলুদের সমারোহ। যেন হলুদ রঙের গালিচা সাজিয়ে রেখেছে এক অপরূপ প্রকৃতি। মাঠে দুলছে সরিষা ফুল।

দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। অনেকে সরিষা ফুলের প্রকৃতিতে সেলফিতে ব্যস্ত। চারিদিকে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত ফসলের দিগন্ত। যেন বিস্তৃর্ণ হলুদের একখন্ড রাজ্য। ভালো ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখেমুখে স্বস্তির ছাপ। বাজারে সরিষার চাহিদা থাকায় চাষিদের আগ্রহ বেড়ে গেছে। কৃষিসমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় দুই ফসলি জমিতে চাষ হচ্ছে তিন ফসল। দেশি জাতের পরিবর্তে আবাদ করেছেন উচ্চফলনশীল বারি-১৪ জাতের সরিষা। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ধনবাড়ী উপজেলায় ১০ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। ধান চাষের পর পতিত জমিতে এ মৌসুমে সরিষা আবাদে ৫০০ হেক্ট নির্ধারণ করা হলেও ৫৬৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গতমৌসুমে সরিষা চাষ হয়েছিল ৪৩০ হেক্টর জমিতে। সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করতে সরকারিভাবে কৃষকদের প্রণোদনা হচ্ছে। মুশুদ্দি গ্রামের কৃষক আনছার আলী বলেন, ‘আগে একটি জমিতে শুধু ধান আবাদ করতাম। ধান আবাদ শেষে জমি পতিত থাকতো। ভোজ্য তেলের দাম বাড়ায় ধান আবাদের পাশাপাশি মাঝখানের সময়টা সরিষা চাষ হচ্ছে। তিনি সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে বারি ১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছেন।

দড়িচন্দ্রবাড়ীর কৃষক আরিফুর রহমান বলেন, সরিষায় ভালো ফলন আশা করছি। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া, পোকা-মাকড় ও রোগবালই আক্রমণ তেমন হয়নি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ১১ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের আবাদ করেছেন। কোনো ধরণের ক্ষতি না হলে লাভবান হতে পারবেন বলে আশা করছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেন, সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দুই ফসলি জমিতে এখন তিন ফসল আবাদ করছে কৃষকরা। ধনবাড়ী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, এ অঞ্চলের মাটি সরিষা চাষের জন্য উপযোগী। যে কারণে এলাকায় আবাদ বাড়ছে। অন্য ফসলের তুলনায় সরিষার চাষে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষদেরও আগ্রহী হচ্ছে। কৃষকদের নানাভাবে সহযোগীতা করা হচ্ছে। আগামী বছর আবাদ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।