আরমান কবীরঃ
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার অনত্যম প্রতিবাদকারী বীরমুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের মৃত্যুবার্ষিকীতে বুধবার(১৮ জানুয়ারি) হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়া মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মরহুমের কবর জিয়ারত, কোরআনখানী, দোয়া মাহফিল ও দরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয় ।
বুধবার(১৮ জানুয়ারি) সকালে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ ও পরিবারের পক্ষ থেকে জনপ্রিয় প্রয়াত নেতা ফারুক আহমদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়া তার নিজ বাসা শহরের কলেজ পাড়ায় কোরআনখানী, দোয়া মাহফিল ও দরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।
দুপুরে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, নিহত ফারুক আহমদের স্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাহার আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন ও সুভাষ চন্দ্র সাহা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হোসেন মানিক প্রমুখ।
এ সময় আওয়ামী লীগ ছাড়াও ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলাটি টাঙ্গাইল প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত ২৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। আগামি ২ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ রয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
২০১৪ সালে ওই মামলায় জড়িত থাকা সন্দেহে আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজা এবং মোহাম্মদ আলী নামক দুই জনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে হত্যার সাথে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে সংসদ সদস্য আমানুর রহমানরা চার ভাইসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়।
এ মামলার আসামি আমানুর রহমান খান আত্মসমর্পনের পর তিন বছর হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত রয়েছেন। তার অপর ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান দুই বছর আগে আদালতে আত্মসমর্পনের পর এখন পর্যন্ত কারাগারে রয়েছেন। আরও কারাগারে রয়েছেন আলমগীর হোসেন। আমানুরের অপর দুই ভাই জাহিদুর রহমান খান ও সানিয়াত খানসহ মো. কবির এবং ছানোয়ার হোসেন পলাতক রয়েছেন। অন্য আসামিদের মধ্যে আনিসুর রহমান রাজা ও মো. সমীর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। অপর আসামি মোহাম্মদ আলী, মাসুদুর রহমান, নাসির উদ্দিন নুরু, ফরিদ আহমেদ ও বাবু জামিনে রয়েছেন।