টাঙ্গাইলে গ্যাসের তীব্র সংকট, জনদুর্ভোগ চরমে

Spread the love

আরমান কবীরঃ

টাঙ্গাইলে গত এক মাস যাবদ শহরের বিভিন্ন এলাকায় সকালে গ্যাসের সংকট ক্রমশ প্রকট আকার ধারণ করছে। লাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় অধিকাংশ বাসাবাড়িতে সকাল বেলা চুলা জ্বলছে না। ফলে রান্না প্রায় এক প্রকার বন্ধ। সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের জন্য কর্মজীবী লোকজনকে আশপাশের হোটেলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের আর্থিক সংকট আরো বাড়ছে।

এ ছাড়া আবাসিকের পাশাপাশি গ্যাস সংকটের কারণে বিসিক শিল্পনগরীসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

টাঙ্গাইল তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে ৩ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। উৎপাদন হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০মিলিয়ন ঘনফুট। যা দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে সমন্বয় করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বাসাবাড়িতে গ্যাসের চাপ কম থাকে। ভোর থেকে পাইপলাইনে চাপ কমতে শুরু করে। চুলায় যে পরিমাণ চাপ থাকে তাতে রান্না করা যায় না। বেলা ১২টার পর চাপ বাড়তে থাকে। প্রতিদিনই লাইনের গ্যাস নিয়ে সমস্যার কারণে অনেকেই এলপি গ্যাস ব্যবহার শুরু করেছেন। এলপি গ্যাসের চাহিদা বেড়ে গেছে। এতে গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার নিয়ে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

শহরের প্যাড়াডাইস পাড়া এলাকার গৃহিণী ফারজানা লিজা বলেন, সকালে গ্যাসের চাপ কম থাকে। এতে রান্না করতে অনেক সময় লাগে। এদিকে তাঁর ছেলে ও মেয়ের কলেজে যাওয়ার সময়ও হয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়েই না খেয়ে তাদের কলেজে যেতে হচ্ছে।

শহরের বটতলা এলাকার বাসিন্দা বিলকিস জাহান বলেন, সকালে কোনো রকম গ্যাস থাকে না। থাকলেও তখন চুলা জ্বলে মিটমিট করে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় এমন অবস্থা থাকে। ফলে সকালের রান্নাবান্নার কাজ রাতেই শেষ করে রাখতে হয়।

পৌর এলাকার কলেজ পাড়ার বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী পারুল আক্তার জানান, গ্যাসের সমস্যার কারণে তিনি ঠিকমতো রান্না করতে পারছেন না। বর্তমানে প্রায় সময়ই পরিবারের সদস্যদের জন্য নাস্তা বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। এছাড়া তিনি দুপুরের খাবারও বাসা থেকে তৈরি করে অফিসে নিয়ে যেতে পারছেন না। ফলে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

টাঙ্গাইল বিসিক শিল্প নগরীর রাফা ফুড এন্ড বেভারেজের মালিক আব্দুল মালেক জানান, গ্যাস সংকটের কারণে তাদের চলমান পণ্য উৎপাদন এরই মধ্যে চার ভাগের এক ভাগ কমে গেছে। সময়মত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন স্বাভাবিকভাবেই বিঘ্ন ঘটছে।

টাঙ্গাইল নাভানা সিএনজি যোগাযোগ ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান বলেন, “গ্যাস সংকটতো রয়েছে। আমরা শতভাগ প্রেসার পাই না। ৭০ থেকে ৮০ ভাগ প্রেসার পাওয়া যায়। এতে করে গাড়িতে গ্যাস দিতে সময় লাগে। গাড়ির লাইন পড়ে যায়।”

টাঙ্গাইল তিতাস গ্যাস টান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম জানান, টাঙ্গাইলে তাদের প্রতিদিন প্রয়োজন ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট। তারা পাচ্ছেন চাহিদার অর্ধেক ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। তীব্র শীতের কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঘাটতি বাড়ছে। শীতের কারণে শহরে বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে ২৪ ঘণ্টা চুলা জ্বালিয়ে রাখে। সে কারণে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় তাদের হিমশিম খেতে হয়।