যুগধারা ডেস্ক :
মাহমুদা আক্তার মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন দাবি করেছেন, বাবুল আক্তার স্ত্রীকে হত্যার দুই বছর আগেই ছক করে সুযোগ খুঁজছিলেন। এমন সন্দেহের কথা মিতু হত্যামামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের আগেও জানিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার (২ মে) তৃতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জসীম উদ্দিনের আদালতে চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে এমন দাবি করেন তিনি। তবে সাত বছর আগে মিতু খুন হওয়ার পর জামাতা বাবুলের পক্ষেই কথা বলেছিলেন মোশাররফ হোসেন।
মিতুর বাবার তখনকার বক্তব্য এবং এখনকার বক্তব্যের ফারাক তুলে ধরে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, মিতুর বাবাকে এমন সাক্ষ্য দিতে ‘বাধ্য’ করা হয়ে থাকতে পারে।
গত ৯ এপ্রিল সাক্ষ্য দেয়া শুরু করেছিলেন মোশাররফ হোসেন। সেদিন তার সাক্ষ্যগ্রহণ অসমাপ্ত ছিল। মঙ্গলবার তিনি তার সাক্ষ্যপ্রদান শেষ করেন। সাক্ষ্য শেষ হওয়ার পর তাকে জেরা শুরু করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এসময় মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তার আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এক সময়ের পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ প্রথমদিনের সাক্ষ্যে বলেছিলেন, বাবুল কক্সবাজার পুলিশে কর্মরত অবস্থায় বিদেশি নাগরিক এক নারী এনজিওকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। মিতু তা জানতে পারার পর তা নিয়ে দাম্পত্য কলহ হয়।
মঙ্গলবার মোশাররফ হোসেন বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদান যাওয়ার আগেই স্ত্রী মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত ছিলেন পুলিশের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার। মিতু খুন হন ২০১৬ সালের ৫ জুন। সেই হিসেবে খুনের ঘটনার দুই বছর আগে পরিকল্পনা করা হয়।
২০১৫ সালে হজে গিয়েছিলেন জানিয়ে সাক্ষ্যে মোশাররফ বলেন, ওই সময় বাবুল সম্ভবত মিশনে ছিল। ওই নারী (বিদেশি নাগরিক) মিতুর ফোনে কল করে হুমকি দেয়, তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। কারণ তাদের (বাবুল এবং ওই নারীর) পরকীয়ার কথা লোকজনকে জানিয়ে মিতু নাকি অপপ্রচার করেছিল।
তিনি বলেন, (মিতু) ফোনে আমাকে বিষয়টি জানালে আমি মিতুকে ওই নারীর কল রিসিভ না করতে বলি।
২০১৬ সালের ১ জুন সকালে মিতু তার ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দেয়ার সময় এই মামলার আসামিরা মিতুকে হত্যার চেষ্টা করেছিল দাবি করে মোশাররফ বলেন, কিন্তু সেদিন মিতু তড়িঘড়ি করে বাসায় চলে আসায় তাকে হত্যা করতে পারেনি।
মিতু খুন হওয়ার ঠিক আগে বাবুল চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার ছিলেন। তিনি বদলি হয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিতে ঢাকায় আসার পর চট্টগ্রামে খুন হন মিতু।
মোশাররফ বলেন, বাবুল সম্ভবত ৪ জুন পুলিশ সদর দপ্তরে যোগদান করে। পরের দিন বাবুলের ষড়যন্ত্র মোতাবেক আসামি মুসা তার সঙ্গীদের নিয়ে মিতুকে হত্যা করে।
খুনিদের রক্ষা করতে বাবুল তখন তড়িঘড়ি জঙ্গিদের দায়ী করে একটি হত্যা মামলা করেছিলেন বলে দাবি করেন মোশাররফ। সেই মামলাতেই এখন আসামি হিসেবে বাবুলের বিচার চলছে।
সাক্ষ্যে মোশাররফ বলেন, আসামি মুসা বাবুলের পূর্বপরিচিত ও বিশ্বস্ত সোর্স। হাটহাজারী ও চট্টগ্রামের বাসায় মুসা আসা-যাওয়া করত। বাবুল আক্তার চট্টগ্রামে ডিবি অফিসে কর্মরত অবস্থায় মুসাকে ডেকে মিতুকে হত্যার নির্দেশনা দেন। তাছাড়া দু-তিনবার মেট্রোপলিটন হাসপাতালের গলিতে মুসাকে ডেকে নিয়ে মিতু হত্যার বিষয়ে আলোচনা করেন।
মিতুকে হত্যা করতে অস্ত্র কেনার জন্য টাকা দাবি করে জানিয়ে সাক্ষ্যে মোশাররফ হোসেন বলেন, বাবুল মুসাকে নগদ ৭০ হাজার টাকা অস্ত্র কেনার জন্য দেয়। বাকি ৩ লাখ টাকা পাথরঘাটার প্রেস মালিক সাইফুল ইসলাম পরিশোধ করে দেবে বলে মুসাকে আশ্বস্ত করে।
তিনি বলেন, বাবুল আক্তার মিশনে সুদান যাওয়ার অনুমতি পেলে সুদানে যাওয়ার আগে মুসাকে হত্যার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে বাসার আশেপাশে রেকি করতে বলেন। এও বলেন, বাবুল যে এ বিষয়ে সম্পৃক্ত তা যেন কেউ জানতে না পারে।
এ দিকে মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং চলমান জেরা মধ্যে আগামী ৮ মে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
যুগধারা ডট টিভি/অন্তু