অন্তু দাস হৃদয় :
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় সমাবর্তনকে ঘিরে অব্যস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। সমাবর্তন প্যান্ডেলে শিক্ষার্থীদের বসার সিট না পাওয়া, খাবার না পাওয়া, শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষক ড. সঞ্জয় কুমার সাহার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, বৈষম্যমূলক পদক প্রদানই ছিল অব্যবস্থাপনার অন্যতম।
গতকাল (৫ মার্চ) রোববার অনুষ্ঠিত ৩য় সমাবর্তন এর বৈষম্যমূলক পদক প্রদান নীতিমালা বাতিল পূর্বক পূর্বের নিয়ম বহাল রাখার জন্য শনিবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ। অবস্থান কর্মসূচিতে প্রতিবাদকারীরা নতুন নিয়ম বাতিল ও পূর্বের নিয়মানুযায়ী ৩য় সমাবর্তনে ডিন’স লিস্ট ও ডিন’স অ্যাওয়ার্ড এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সকল পদক প্রদানের দাবী জানায়।
সমাবর্তন অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে রেজিষ্ট্রেশনকৃত টেক্সটাইলসহ দুইটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা ও খাবার সংকট দেখা দেয়ায় প্রতিবাদ জানায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সাথে শিক্ষার্থীদের বাক-বিতন্ডা হয়। এ পর্যায়ে প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি এন্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স (এফটিএনএস) চতুর্থ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জুয়েলকে ইডিয়ট বলে গালি দেন। এর প্রতিবাদও জানায় শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তনের মুল অনুষ্ঠান শেষে রেজিষ্ট্রেশনকৃত ২টি বিভাগ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিকেল ৪ টায় খাবার পায়। সময়মত খাবার না পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী খাবার না নিয়েই মা-বাবার সাথে চলে যান। খাবার নিয়েও অভিযোগ পাওয়া যায় যে, অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের উন্নতমানের খাবার দেয়া হয়, আর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থীদের পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্যান্য অতিথিদের জন্য বরাদ্দকৃত নিম্মমানের খাবার দেয়া হয়।
এ ছাড়াও ‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনা চলে না। দেখা গেল, পদক পাওয়া সেই শিক্ষার্থী চাকরি পেল না। তখন এটি নিয়ে আরও বেশি সমালোচনা হব।’ সমাবর্তনে পদক দেয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পদক কমিটির সদস্য সচিব ড. সঞ্জয় কুমার সাহা বলেও অভিযোগ উঠেছে। অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সাহার দেয়া বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদ তারা জানিয়েছে।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাথে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ ফরহাদ হোসেনের প্রায় ঘন্টা ব্যাপী বাক-বিতন্ডা হয়।
এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বয়কট করে সমাবর্তন প্যান্ডেলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। প্রায় দেড় ঘন্টা শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈঠকের পর বিদ্যুৎ সংযোগ সচল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
ফুড টেকনোলজি এন্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স (এফটিএনএস) নবম ব্যাচের রেজিষ্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থী কে.বি শৈশব বলেন, আমরা বসার চেয়ার না পাওয়ায় প্রতিবাদ করতে থাকি। এ সময় আমাদের সাথে চতুর্থ ব্যাচের জুয়েল, আনোয়ার, তুষার,সিরাজ ভাইসহ বেশ কয়েকজন প্রতিবাদ করেন। আমরা প্রতিবাদ করায় প্রক্টর সাহেব আমাদের সিনিয়র জুয়েল ভাইকে ইডিয়ট বলে গালি দেন। এতে আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মঞ্চ থেকে বের হয়ে আসি। এ পর্যায়ে বিশ^বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় আমাদের প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে টেক্সটাইল বিভাগসহ মোট দুইটি বিভাগের রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীরা খাবার সংকটে পড়েন।
এছাড়াও সমাবর্তনে পদক প্রদানের বিষয়ে গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধাহীন বলে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সাহা। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি আমরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ওই শিক্ষকের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের বিচারও দাবি করেছেন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
ইডিয়ট বলে গালি দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন ফুড টেকনোলজি এন্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স (এফটিএনএস) চতুর্থ ব্যাচের রেজিষ্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম জুয়েল। তবে তার কর্মস্থলে জরুরী একটি মিটিংয়ে উপস্থিত থাকায় কথা সংক্ষিপ্ত করতে হলো বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অদক্ষতার কারণে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অপমানিত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তনে অব্যবস্থাপনার মূলেই ছিল অভিভাবকসহ রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীদের সময় মত খাবার দিতে না পারাসহ বসার সিট সংকট।
তবে পদক বির্তক ছিল অন্যতম। যার ফলে শিক্ষার্থীরা সমাবর্তন বয়কট করার মত সিদ্ধান্ত নেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষার্থে বয়কটের সেই সিদ্ধান্তটি বাতিল করেন শিক্ষার্থীরা।
পদক প্রদান কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, পদক দেয়া বা বাতিল করার মত সিদ্ধান্ত দেয়ার আমি কেউ নয়। পদক কমিটির একজন সদস্য মাত্র আমি। সিদ্ধান্ত হয়েছে পদক কমিটিতে। এছাড়াও যে শিক্ষার্থীদের আমি নিজে পড়িয়েছি তাদের মেধা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্ক ছড়ানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মীর মো. মোজাম্মেল হক বলেন, দায়িত্ব পালনকালে এমন অনেক কথায় হতে পারে, তবে সে কথা নিয়ে সরাসরি সংবাদকর্মীরা প্রশ্ন তুলবেন এটি কোন ধরণের সাংবাদিকতা, সেটি নিয়ে প্রশ্ন আসে। আপনী ক্যাম্পাসে আসেন সরাসরি কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. ফরহাদ হোসেন জানান, বড় অনুষ্ঠানে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। তবে প্রক্টরের গালিগালাজ বা পদক প্রদান কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সাহার শিক্ষার্থীদের মেধা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মত কোন বক্তব্য নিয়ে আমি কোন অভিযোগ পায়নি। টেবিল টক এরম ত কোন কথা হতে পারে। অভিযোগ আসলে আমরা বিষয়টি দেখবো।
উল্লেখ্য, পদক প্রদানে সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে নতুন নিয়মে ৩.৮০ এর স্থলে উপাচার্য পদক ৩.৯৬ ও আচার্য পদক ৩.৯৮ করা হয়েছে।
যুগধারা ডট টিভি/অন্তু দাস হৃদয়