স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকা – টাঙ্গাইল – বঙ্গবন্ধুসেতু – উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ও যানবাহন চলাচলের প্রবেশপথ খ্যাত এলেঙ্গা বঙ্গবন্ধুসেতু পূর্বপাড়ের মহাসড়কটি দীর্ঘদিন যাবত দূর্ভোগে পরিনত হয়েছে। ৬ শত ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্প ৩ বছরে শেষ করার কথা থাকলেও, গত দেড় বছরে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছেনা।
যার ফলে ওই মহাসড়কটি’তে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা, দূর্ঘটনায় যানবাহন জীবনহানির মত অপুরনীয় ক্ষতিও হচ্ছে অহরহ। রাস্তাটিতে গণপরিবহনের চাপ বেশী থাকায় যানজট নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। মহাসড়কটির চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের সুবিধা পেলেও দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব ১৩ কিলোমিটার দুই লেনের মহাসড়কে।
জনদুর্ভোগ প্রশমিত করতে সরকার ওই সড়কটির ১৩ কিলোমিটার এলেঙ্গা হতে বঙ্গবন্ধুসেতু সড়ক চার লেনে উন্নীত করতে উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।
প্রাথমিক পর্যায়ের সকল কার্যাদি শেষকরে আব্দুল মোনেম লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ওই মহাসড়কটি ৪ লেনে সম্প্রসারনে গত দেড় বছরে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। তদুপরি তারা নিজেরা মাটি ভরাটের কোন কাজ না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় স্থানীয় প্রভাবশালী হযরত চেয়ারম্যান, আলীম চেয়ারম্যান, মাসুদ চেয়ারম্যান, মোহন, মনিরুজ্জান ও জহির নামের ব্যক্তিদেরকে মাটি ভরাটের সাব কন্টাক্ট দিয়েছেন, যাদের বড়কোন প্রকল্পের কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।
৬ শত ১ কোটি টাকা ব্যয়ে এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পে ১৩.৬ কিমি মহাসড়কে ১টি ফ্লাইওভার, ৮টি ব্রিজ, ১০টি কালভার্ট ও ২টি আন্ডারপাসসহ একটি সার্ভিস লেন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।প্যাকেজ-৫ এর অধীন কাজ বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩.৬ কিমি রাস্তা প্রায় ৬০১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ লেনসহ এসএমভিটি (সার্ভিস লেন) করার কথা।
অতি সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কটির দক্ষিণ পাশে রাস্ত প্রসস্থ করনের কাজ শুরু করেছে আব্দুল মোমেন লিমিটেডের পক্ষে তাদের নিয়োজিত সাব ঠিকাদারেরা। তারা খুবই ধীরগতিতে বলগেটের মাধ্যমে পাইপযোগে প্রকল্পে বালুমাটি ফেলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আব্দুল মোমেন লিমিটেডের জনৈক কর্মকর্তা জানিয়েছেন আগামী ২০২৪ সালে জুন মাসে কাজটি শেষ করার কথা রয়েছে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানাযায়, ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর থেকে উত্তরবঙ্গের ১৭টি জেলাসহ মোট ২৩টি জেলার যানবাহন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে চলাচল শুরু করে। এতে মহাসড়কে গাড়ির চাপ ব্যাপক ভাবে বেড়ে যায়। গাড়ির তুলনায় মহাসড়কটি সম্প্রসারিত না থাকায় প্রতিদিনই যানজটসহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে পথচারী, চালক, হেলপার, যাত্রীদেরকে এবং সড়ক ও সড়ক যানের ক্ষতি হচ্ছে ব্যপকহারে।
দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সরকার সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নেয়।
ওই মহাসড়ক প্রকল্পটি ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় দীর্ঘদিন দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে মহাসড়কে চলাচলকারি যানবাহন ও সাধারন মানুষকে। দীর্ঘ দুর্ভোগের পরে সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শেষ হওয়ায় এলেঙ্গা হতে চন্দ্রা পর্যন্ত রাস্তার দুর্ভোগ কিছুটা প্রসমিত হয়েছে।একইসাথে সড়ক দূর্ঘটনাও হ্রাস পেয়েছে।
মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজের ধীরগতি ও অদক্ষ সাব ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে আব্দুল মোমেন লিমিটেডের স্থানীয় অফিসে প্রজেক্ট ম্যানেজারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা, আপনারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। পরবর্তীতে ওই অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী (কনসালটেন্ট) আব্দুল হাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি আমাদের প্রতিনিধির সাথে দেখা করেননি।
এ বিষয়ে আব্দুল মোমেন লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর নজরুল ইসলাম খানের সাথে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব চার লেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে মহাসড়কের চার লেনের কাজ শেষ করার আশা করছি। মহাসড়ক নির্মাণ কাজের ব্যয় বাড়বে কি না সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত পয়েন্ট ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। মূল কাজ শুরু হতে আরও সময় লাগবে।