কাশীনাথ মজুমদার পিংকু : “গোপন প্রকাশ্য হলে/ আলোকের দ্যুতি কমে যায়/ গোপনের ঘরে গোপনকেই/ রেখে দেওয়া ভাল/ গোপনেরও সৌন্দর্য আছে/ শিল্পের সকল সংজ্ঞা / শুধুমাত্র প্রকাশে মেলে না/ অপ্রকাশও জীবনের সৌন্দর্য প্রতীক।”
এই পঙক্তিগুলো কবি মাহমুদ কামালের। হ্যাঁ, আমাদের কবি মাহমুদ কামালের। তার সম্পর্কে ওপার বাংলার খ্যাতিমান কবি কাজল চক্রবর্তী লিখেছেন- “সো-কল্ড বাবু শ্রেণীর কবি কামাল নয়—“। আর তা নয় বলেই হয়তো টাঙ্গাইলের মাটি ও মানুষের সাথে মিশে থাকা এই কবিকে বয়স বা দশকের সীমারেখায় বেঁধে রাখা যায়নি। স্থান,কাল,পাত্র অতিক্রম করে তিনি পৌঁছে গেছেন দূর থেকে দূর সীমানায়। তার কবিতা শুধু দুই বাংলায় নয়, সব বাংলাতেই হয়েছে সমানভাবে সমাদৃত। শুধুই কী কবিতা? না। ছড়া, গল্প, প্রবন্ধ, সম্পাদনা, সাংবাদিকতা অথবা সাংগঠনিক দক্ষতা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক একজন আলাদা মাহমুদ কামালকে খুঁজে পাওয়া যায়। তারপরও তার কবিসত্তার কাছে অন্য সকল পরিচয় ম্রিয়মাণ।
একজন স্বতন্ত্র কবি হিসেবেও মাহমুদ কামাল অনন্য। তিনি উত্তর আধুনিক বাংলা কবিতায় তার নিজস্ব একটি ” কাব্য ভাষা” তৈরি করতে পেরেছেন। তার কাব্য ভাষাও কবিতাপ্রেমীদের কাছে সুপরিচিত। টাঙ্গাইলের সাহিত্য অঙ্গনে হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালা খ্যাত কবি মাহমুদ কামাল একজন ছন্দ সচেতন কবি । শুধু সচেতন বললে ভুল হবে। পর্ব, ছন্দ আর মাত্রা বিন্যাসে তিনি একটু অধিক সচেতন বলেও তার পাঠকেরা মনে করেন। কবিতার বিষয় প্রকরণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে তিনি অন্যদের থেকে আলাদা বলেই কবিতার অতি সাধারণ বিষয়কেও শৈল্পিক ছোঁয়ায় অনন্য করার এক অসাধারণ গুণ রয়েছে তার মধ্যে। এই দিক থেকে মাহমুদ কামালকে একজন একনিষ্ঠ কবিতা সাধক বলা যেতে পারে। তার ধ্যান,জ্ঞান,চিন্তা, চেতনা আর মননশীলতার পরতে পরতে রয়েছে কবিতার পঙক্তিমালা।
শহরের হাতছানি অথবা রাষ্ট্রীয় কোন পদক বা পুরষ্কার কোনটাই যার লেখার গতিশীলতার কাছে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি তিনি কবি মাহমুদ কামাল। কবিরা উদার হন এটা স্বাভাবিক। তাইতো এতসব কালজয়ী সৃষ্টির পরও কিছু অপ্রাপ্তি তাকে পিছু হটাতে পারেনি। অভিমান নয়, কাব্যের প্রতি ভালোবাসা খেকে অকপটে তিনি বলতে পারেন- মানুষের ভালোবাসাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পুরষ্কার। তারপরও কবি মাহমুদ কামালের একজন মন্ত্রমুগ্ধ পাঠক হিসেবে রাষ্ট্র তাকে আজ অথবা কাল তার যথাযোগ্য সন্মান দেবে ৬৭ তম জন্মদিনে এই প্রত্যাশা আমাদের থাকতেই পারে।
গোপনের মাঝে সৌন্দর্য সবাই খুঁজে পান না। খুঁজে বেড়ানোর চেষ্টাও সবাই করেন না। আর যারা করেন বা করতে পারেন তারাই হয়ে উঠেন প্রকৃত কবি। মাহমুদ কামাল তাদেরই একজন। তাইতো তিনি বলতে পারেন-
” ঘরে ঢুকতেই বিদ্যুৎ চমকাল/ এত আলো এত আলো/ স্বরলিপি যেন ঘন মেঘে গর্জায়/ হাসের ঝিলিক নেচে উঠে দরজায়।/ কী নাম তোমার উর্মি, অর্পা, পর্ণা?/ পদ্যেই তুমি টানটান ঋজু প্রবাহিত শত ঝরনা।/ ঘরে ঢুকতেই বিদ্যুৎ চমকাল/ চোখের চম্পূ চোখেই আটকে গেল।”
পরম শ্রদ্ধেয় এই কবির ৬৮ বছর পদাপর্ণে রইলো অতল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
যুগে যুগে দেশে দেশে বাংলা কবিতার জয় হোক।
জয়তুঃ কবি মাহমুদ কামাল।