টাঙ্গাইলে আমনের ফলন ভাল শুরু হয়েছে কাটা

Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার ঃ টাঙ্গাইলের দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে নির্মল হাওয়ায় এখন নেচে ওঠছে উজ্জল ধান ক্ষেতের ধানের সোনালি গুচ্ছ। পাকা ধানের রং দেখে এ জেলার কৃষকের মনে বয়ছে আনন্দের হিল্লোল ।দিগন্ত জুড়ে আমন ধানের ক্ষেত যেন বাঙালীর নবান্নের উৎসবের ক্ষণগনণার তাগাদা দিচ্ছে। শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা।আমন ধানই হলো নবান্নের ধান।পল্লী কবি জসীমউদদীন আমন ধান পাকার সময়কে তুলে ধরেছেন এভাবে-আশ্বিন গেলো কার্ত্তিক মাসে পাকিল ক্ষেতের ধান/সারা মাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হলদি -কোটার গান।ধানে ধান লাগি বাজিছে বাজনা/গন্ধ উড়িছে বায়/কলমী লতায় দোলন লেগেছে/ হেসে কুল নাহি পায়। টাঙ্গাইলে এভার আমন আবাদের শুরুটা মোটেও ভাল ছিলো না ।

প্রথম থেকেই কৃষকের মধ্যে ছিল শষ্কা।প্রকৃতির সেচের ওপর নির্ভর আমন আবাদ।অথচ এভার বর্ষা মৌসুমে বিরাজ করে প্রচন্ড খরা।এভারের খরা এতটাই দীর্ঘ মেয়াদী ছিল যে নিচু এলাকার জমি চাষ করতেও কৃষক মাঠে সেচ যন্ত্র নামাতে বাধ্য হয়ে ছিল।আমনের চারা লাগানো যখন শেষ তখন বানের জলে তলিয়ে যায় নিচু এলাকার আমন ধান।পানি সরে গেলে আবার ধানের চারা লাগানো প্রস্তুতি নেয় কৃষক।জমি তৈরির কাজ শেষ না হতেই মাঠ ডুবে যায় বানের জলে।এমতাবস্থায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগও ছিল ভাবনার মধ্যে।আমনের যে টার্গেট তারা করেছিলো তা পূরণ না হওয়ার শষ্কা দেখা দেয়।নানা চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে এভার কৃষক আমন চাষ করে।৬ দফা বন্যার পরও আশ্বিনের শেষে মাঠ ভরা সবুজ ধান গাছ দোল খেতে দেখে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।শরৎতের শেষে সিত্রাং এর প্রভাবে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি সেই হাসি কিছুটা ম্লাণ হয়ে যায়।

এর পরও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় মাঠ ঘুরে দেখা যায় আমনের ফলন এবার ভালই হবে। ঘাটাইল উপজেলার আনেহলা ইউনিয়নের যোগিহাটি গ্রামের কৃষক মিনহাজ আকন্দ(৬০) জানান‘শুরুতে পানির অভাবে ধান লাগাতে পারি নাই।কয়েকবার বানের পানি আইছে।তারপরও আল্লার রহম ভালাই অইছে।’ গোপালপুর উপজেলার আলমনগর গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী(৫৫) বলেন‘,আমন চাষ নিয়ে ্এভার বিপাকে পড়েছিলাম।প্রথমে দীর্ঘ খরা।পরে আবার দফায় দফায় বন্যা।পোকার আক্রমনও হয়েছিল।তবে শেষ পযর্ন্ত ফলন ভালই হইছে।’কালিহাতি উপজেলার মাদারিয়া পাড়া গ্রামের কৃষক আবু হানিফ (৭০) বলেন,‘কিছু কিছু এলাকার কৃষক এবার আমন ধানের আশা ছেড়েই দিয়ে ছিলো।

তারপরও ফলন ভালই হবে।চালের যে দাম আমন না হলে অনেকে ভাতই পেত না।’ ভূঞাপুর উপজেলার কয়ড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল(৬৫)বলেন,‘আমন ধানের জমিতে পোকা ধরে ছিল।কীটনাশক ব্যবহারে পোকা চলে যায়।এখন আবাদ ভালই দেখা যাচ্ছে।’ টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমন আবাদ নিয়ে কৃষকের মাঝে যে হতাশা দেখা দিয়ে ছিল তা কেটে গেছে।কৃষি বিভাগও আমন আবাদ নিয়ে এখন আশাবাদী।ইতমধ্যে আগাম জাতের ব্রি-৭৫,ব্রি-৮৭,পাজাম ও বিনা সহ যে ধান গুলো কাটা শুরু হয়েছে তার ফলনও ভাল।কৃষকরা আশা করছে আগাম জাতের এ ধান কার্ত্তিক মাসের অভাব কিছুটা দূর করবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে এভার টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলায় আমন আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল,৯৫ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ।আবাদ হয়েছে ৯৮ হাজার ৫শ ৭২ হেক্টর জমিতে। লক্ষমাত্রার চেয়ে যা ৩ ভাগ বেশি ।

উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৫শ ২০ মেট্রিক টন।এ লক্ষমাত্রা পেরিয়ে যাবে এমন আশাবাদ কৃষি বিভাগের। কৃষি স্প্রসারণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের উপ-পরিচালক আহসানুল বাসার বলেন,‘অনাবৃষ্টি,বন্যা,সিত্রাং সহ কোনো প্রাকৃতিক দূযোর্গ আমন আবাদে প্রভাব ফেলতে পারেনি।খরার সময় এ জেলার কৃষকরা ৩ হাজার সেচ পাম্প চালিয়ে আমন চাষ করেছে।অতি খরার কারনে নাগরপুর উপজেলার নিচু জমি সহ জেলার সব নিচু জমিতে আগে যেখানে আমন চাষ হয়নি এভার সেখানে হয়েছে। আশা করছি লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি আমন উৎপাদন হবে।