টাঙ্গািইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলে তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ (সাদ পন্থি) এর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সোমবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলা আমীর শহিদুল ইসলামের নের্তৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল জেলা প্রশাসক শরীফা হকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।
জানা যায়, এর আগে তারা টাঙ্গাইলের তিনটি মসজিদে একত্রিত হয়। সেখান থেকে একত্রিত হয়ে তারা টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনীর কাছে সস্মারকলিপি প্রদান করে। স্মারকলিপিতে লিখিত ভাবে টাঙ্গাইল জেলার আমীর শহিদুল ইসলাম জানান, দাওয়াত ও তাবলীগের কার্যক্রম সম্পর্ণ অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ। আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে ভারতের দিল্লীস্থ নিজামুদ্দীন বাংলাওয়ালী মসজিদ হতে হযরত মাওলানা ইলিয়াছ (রহঃ) , রসুলুল্লাহ (সাঃ) ও ছাহাবা (রাঃ) এর তরীকার অনুসরণে এ মেহনত শুরু করেন। বর্তমানেও উক্ত নিজামুদ্দীন বিশ্ব মার্কাজ মসজিদ হতে বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা সাদ কান্দলভী (দাঃবাঃ) এর মাধ্যমে এটি সমগ্র বিশ্বে পরিচালিত হচ্ছে এবং ক্রমাগত প্রচার-প্রসার লাভ করছে। নিজামুদ্দীন বিশ্ব মার্কাজকে যাঁরা অনুসরণ করছেন তাঁরাই আসল তাবলীগওয়ালা। দাওয়াত ও তাবলীগের বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা সাদ (দাঃবাঃ) সম্পর্কে দেওবন্দ মাদ্রাসাকে উদ্ধৃত করে তথাকথিত মাওলানা জুবায়ের পন্থীগণ এবং তাদের প্ররোচনায় কিছু আলেম অসত্য তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার কিছু ব্যক্তির সাথে উনার মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছিল। বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে মর্মে দেওবন্দ মাদ্রাসার সর্বোচ্চ কর্ণধার বিশ্ব বরেণ্য আলেম হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী (দাঃবাঃ) গত ফেব্রুয়ারি’২৪ মাসে বাংলাদেশে এসে স্পষ্টভাবে জানিয়ে গিয়েছেন। উনার অডিও রেকর্ড আমাদের সংরক্ষণে আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেওবন্দ মাদ্রাসা কখনোই হয়রত মাওলানা সা’দ (দাঃবাঃ) কে বাংলাদেশে আসতে বাধা দেওয়া বা উনাকে যারা আমীর মানেন তাঁদের মসজিদে আমল বন্ধ করা বা বাধা দেওয়ার কথা বলেননি। বরং দেওবন্দ মাদ্রাসার ৬৯৫১৮ নং ফতোয়া হলো- নিজামুদ্দীন মার্কাজওয়ালাদের যে গোমরাহ বলবে সে নিজেই গোমরাহ। এছাড়া দেওবন্দ মাদ্রাসার ৬৯১৫৮, ১৫৬১৩১, ১৬৫৩৯৫, ১৫২৬৮৭ নং ফতোয়াসমূহে নিজামুদ্দীন মার্কাজের অনুসারীদের মসজিদে আমল করতে বাধা দেওয়াসহ তাদের ব্যাপারে আপত্তিকর কথা বলার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। দেওবন্দ মাদ্রাসার ওয়েবসাইটে ফতোয়াসমূহ রয়েছে।
অপর বিশ্ব বরেণ্য আলেম পাকিস্থানের হযরত মাওলানা মুফতি ত্বকী উসমানী (দাঃবাঃ) অর্ক্টোব’২৪ মাসে সৌদী আরবে অবস্থানকালে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তাবলীগের উভয় পক্ষই হক। তাহলে আসল তাবলীগওয়ালাদের মসজিদে আমল বন্ধ করার জন্য যারা অপতৎপরতা চালাচ্ছে তারা প্রকৃত ইসলাম দরদি নয়। এজন্য টাঙ্গাইল জেলার দাওয়াত ও তাবলীগের সাথীগণ নিম্নবর্ণিত দুটি বিষয়ে দাবী জানাই- ১। কোনরূপ যৌক্তিক কারণ ছাড়াই দাওয়াত ও তাবলীগের বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা সাদ (দাঃবাঃ) বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। বিগত ৭ বছর যাবৎ আমরা কোরআন ও হাদিসের আলোকে উনার মূল্যবান বক্তব্য শুনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি অথচ তিনি ইতোপূর্বে বিশ্ব ইজতেমার প্রধান বক্তা ছিলেন এবং আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করতেন। তিনি বাধাহীনভাবে সারা বিশ্বে তাবলীগের কাজে ছফর করে চলেছেন। তাই এবছর যাতে অমাদের বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা সাদ (দাঃবাঃ) অবশ্যই বাংলাদেশে আসতে পারেন সেজন্য আমরা জোর দাবী জানাচ্ছি। ২। বিগত ৭ বছর যাবৎ জুবায়েরপন্থীগণ আমাদের মূলধারার সাথীদের মসজিদে দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার জন্য বিভিন্নভাবে মারপিঠ, হত্যা ও জুলুম-নির্যাতন এবং কুৎসা রটনা ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। যা ইসলামি শরিয়ত, বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখার স্বার্থে দেশের সকল মসজিদে বাধাহীনভাবে তাবলীগের কাজ পরিচালিত হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট আদেশ জারির জন্যও দাবী জানাচ্ছি।
এসময় জেলা আমির শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের বিশ্ব ইজতেমার আমীর মওলানা সাদ সাহেবকে ইজতেমায় আসার জন্য অনুমতি যেন সরকার দেয় সেজন্য আমরা স্মারক লিপি জমা দিলাম। আমরা চাই আগের মতো যেন ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন মুফতি মোস্তফা খলির, মুফতি শহিদুল্লাহ, আব্দুর রহমান শামীম, নাজির খান, মশিউর ইসলাম নোমান, শামীম আহমেদ, নাজমুল হাসান, মহিউদ্দিন তালুকদার, ওমর ফারুক প্রমুখ। এসময় জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় এক হাজার তাবলীগ জামাত (সাদ পন্থীরা) উপস্থিত ছিলেন।