মুক্তার হাসান ঃ ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে টাঙ্গাইলের বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে। গেল দুই সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশের দায়ের করা ১১টি মামলায় প্রায় দুই শতাধিক বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে ৭০ জন নেতাকর্মীকে। ঢাকার সমাবেশে যাতে না যেতে পারে সে জন্য বাধা সৃষ্টি করতেই সরকারের নির্দেশে পুলিশ এসব ‘মিথ্যা’ মামলা দায়ের করেছে বলে দাবি বিএনপি নেতাদের।
তবে বিএনপি নেতাদের এ অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, নাশকতা সৃষ্টির প্রস্তুতিসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এসব মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে ভূঞাপুর উপজেলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫০ থেকে ৬০ জন বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন থানার উপপরিদর্শক এসআই আবদুস সালাম। ওই দিন রাতেই ইলিয়াস নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরের দিন শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় শ্রমিক দল নেতা ঠান্ডু সরদারকে। এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। আত্মরক্ষার্থে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। পরে সেখান থেকে ইলিয়াস নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বাকিরা পালিয়ে যায়। এঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এ মামলায় শুক্রবার রাতে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু জানান, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে সরকার বানচাল করতে পুলিশ দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি ও মিথ্যা-গায়েবি মামলা দিচ্ছেন। শিয়ালকোল এলাকায় এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মামলায় দুই নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এদিকে নাশকতা ও ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় ঘাটাইল উপজেলার ৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
সে মামলায় এ পর্যন্ত ১০ বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘাটাইলের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লুৎফর রহমান খান আজাদ বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর ঢাকায় জনসভাকে সফল করতে ২২ নভেম্বর দিগড় ইউনিয়নের কাশতলা বিটিপাড়া এলাকায় কর্মী সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ গুলি ছুড়েছে। এছাড়াও নেতাকর্মীদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। অন্য বাড়ি থেকে বালতি এনে পুলিশ ককটেল রেখে গতানুগতিক ভাবে নাটক সাজিয়েছে। ঘাটাইল থানার ওসি আজহারুল ইসলাম বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে নাশকতার উদ্দেশে জমায়েত হয়েছিলেন। সেখান থেকে কয়েকটি ককটেলও উদ্ধার করা হয়েছে।
একই ধরনের মামলা দায়ের করা হয়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। মামলার বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার অভিযানের পরও ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। পরিবহন সংকটসহ নানা সমস্যা মাথায় রেখে আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকেই ঢাকায় যাত্রা শুরু করবেন নেতাকর্মীরা। টাঙ্গাইল জেলা থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ২৫-৩০ হাজার নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেবেন বলে আশা করেন তিনি।
বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। রিমান্ডও চাওয়া হয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।