দুই মোড়ের নাম পরিবর্তন: সমালোচনার মুখে সিদ্ধান্ত থেকে সরেছে কেসিস

Spread the love

যুগধারা ডেস্ক :

সমালোচনার মুখে খুলনা মহানগরীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। তাই, নগরীর ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ (ময়লাপোতা মোড়) এবং ‘শিববাড়ির মোড়’ নাম দুটি পরিবর্তন হচ্ছে না। এর আগে নগরীর ‘শিববাড়ি মোড়’ নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ এবং বর্তমান ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর (ময়লাপোতা মোড়)’ নাম পরিবর্তন করে ‘শহিদ শেখ আবু নাসের চত্বর’ করার উদ্যোগ নিয়েছিল কেসিসি।

কেসিসির মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ঐতিহ্যবাহী শিববাড়ি মোড়সহ দুটি মোড়ের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে।

কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, রোববার (৩০ এপ্রিল) নগর ভবনে কেসিসির ১৯তম সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। এটাই বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরদের শেষ সাধারণ সভা। এ সভার আলোচ্য সূচির ৫ নম্বরে ছিল ‘নগরীর শিববাড়ি মোড়ের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু চত্বর এবং বর্তমান বঙ্গবন্ধু চত্বরের (শেরে বাংলা রোড ও কেডিএ এভিনিউয়ের সংযোগস্থল) নাম পরিবর্তন করে শহিদ শেখ আবু নাসের চত্বর নামে নামকরণ প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ’। এর আগে কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম এ সভার নোটিশ দেন।

এরপর গত শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) নোটিশটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে খুলনাসহ দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়।

খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সোহেল বিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আর আইডিতে লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহারে নীতিমালা হওয়া উচিত। যত্রতত্র বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে যেন বিতর্ক সৃষ্টি না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। যত্রতত্র নাম ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুকে সম্মানিত করতে গিয়ে যেন অসম্মানিত না করি।’

বিশিষ্ট চিকিৎসক আমিরুল খসরু তার নিজের ফেসবুকে ওয়ালে লিখেছেন, ‘নতুন নামে শিববাড়ি মোড়ের কোনো ফায়দা না হলেও কারো কারো নিশ্চয়ই হবে। অসীমের সঙ্গে তুলনীয় বঙ্গবন্ধুকে আমরা কবে যথাযথ সম্মান দেখাতে শিখব?’

এ বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, খুলনার আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ববি বলেন, নগরীর শিববাড়ি মোড়ের নামটি ঐতিহ্যবাহী। শিববাড়ি নাম পরিবর্তন না করার দাবি জানাচ্ছি।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি জায়গার নাম সরিয়ে বঙ্গবন্ধুর নাম স্থাপন করা কি সঠিক সিদ্ধান্ত হবে? তা না করে নতুন কোনো সড়ক, এলাকা বা স্থাপনার নাম বঙ্গবন্ধুর নামে করলে কোনো সমালোচনা বা বিতর্ক হবে না।

খুলনার নাগরিক নেতা আনোয়ারুল কাদির বলেন, ওই দুটি স্থানের সঙ্গে খুলনার ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। শিববাড়ি এলাকায় দুটি শিবমন্দির ছিল। সে অনুযায়ী ওই মোড়ের নামকরণ হয়েছে। ৩০ বছর আগে সাবেক মেয়র তৈয়বুর রহমান ওই মোড়ের নাম পরিবর্তন করে বাবরি চত্বর করেছিলেন, কিন্তু সেটা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। মানুষ এখনো শিববাড়ি বলতে ওই এলাকাকে চেনে।

অন্যদিকে, একসময় নগরের সব বর্জ্য ফেলা হতো ময়লাপোতা এলাকায়। এ কারণে ওই এলাকার নামকরণ হয়ে যায় ময়লাপোতা। পরবর্তী সময়ে জায়গাটির নাম সোনাপোতা করা হলেও সেটি এখনও ময়লাপোতা হিসেবে পরিচিত।

তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের হৃদয়ে আছেন। তার নামে কোনো ঐতিহ্যগত স্থানের নামকরণ করে তাকে বিতর্কিত করা বা ঐতিহ্য নষ্ট করা ঠিক হবে না।’

যুগধারা ডট টিভি/অন্তু