যুগধারা ডেস্ক :
এক-দুই বছর নয়, ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ নিজেদের ঘরে তুলেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। আর রোমাঞ্চকর ফাইনাল ম্যাচে সাদা-কালোদের বিপরীতে ছিল চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড।
মঙ্গলবার (৩০ মে) কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে জিতেছে মোহামেডান। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো শ্বাসরুদ্ধকর এই ম্যাচে গোল হয়েছে ৮টি। এর আগে ২০১৪ সালে স্বাধীনতা কাপ জিতেছিল মোহামেডান।
মঙ্গলবার নির্ধারিত ৯০ মিনিট ৩-৩ গোলে সমতায় শেষ হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও ৪-৪ গোলের সমতা। শেষ পর্যন্ত ৮ গোলের এই নাটকীয় ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে। এতে পেনাল্টি মিস করেন আবাহনীর দুই বিদেশি খেলোয়াড় রাফায়েল আগুস্তো ও দানিয়েল কলিনদ্রেস।
অন্যদিকে মোহামেডানের হয়ে একটি পেনাল্টি মিস করেন শাহরিয়ার ঈমন। তবে এরপর চতুর্থ শট নিতে আসা কামরুল ইসলাম জাল খুঁজে পেলে উল্লাসে মেতে ওঠে মোহামেডান গ্যালারি।
কুমিল্লার ধর্মসাগর পাড়ে ম্যাচের শুরুতে তেমন উত্তেজনা ছিল না। তবে যত সময় গড়িয়েছে ম্যাচের উত্তেজনার পারদ ততই চড়েছে।
প্রথমার্ধে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া মোহামেডান ম্যাচে ফিরে আসে দারুণভাবে। সাদা-কালোর হয়ে সোলেমান দিয়াবাতেও গড়েছেন নতুন ইতিহাস। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে প্রথম চার গোল করেছেন তিনি।
প্রথমার্ধের পুরোটা সময়ই মোহামেডানের ওপর চড়াও হয়ে খেলে যায় আবাহনী। একের পর এক আক্রমণে মোহামেডানের রক্ষণভাগকে ব্যস্ত করে রাখে পুরোটা সময়। তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় মিনিটে আরিফ হোসেনের লম্বা থ্রো-ইন হেডে ক্লিয়ার করতে চেয়েছিল মোহামেডান। ফিরতি বলে রাফায়েল আগুস্তোর হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
সপ্তম মিনিটে ডি-বক্সের ডান প্রান্ত ধরে এগিয়ে এসে শট করেছিলেন এমেকা। তবে তার বাঁকানো শট বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। গোলের জন্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি আবাহনীকে। ১৫ মিনিটে এমেকার ডিফেন্স চেরা ক্রস পেয়ে যান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তার নিচু শট গোলরক্ষক সুজনের পায়ে লেগে জালে জড়ায়। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী।
গোল হওয়ার পর আবাহনীর সমর্থকরা উল্লাসে মেতে ওঠে। গ্যালারিতে নীল-হলুদ ধোঁয়ার মশাল জ্বালিয়ে উদযাপন করেন তারা। ২৯ মিনিটে বক্সের ডান প্রান্ত থেকে কলিনদ্রেসের ক্রস বক্সের ভেতর পেয়ে যান এমেকা। দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল দেন বাঁ প্রান্তে থাকা ফয়সালের কাছে। তার শট রুখে দেন মোহামেডানের গোলরক্ষক।
৪৩ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কলিনদ্রেস। মাঝ মাঠ থেকে লম্বা করে বল বাড়ান হৃদয়। বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান কলিনদ্রেস। দ্রুত গতির শটে দূরের পোস্টে বল জালে জড়িয়ে দলকে ২-০ গোলের লিড এনে দেন তিনি।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে বদলে যায় খেলার দৃশ্যপট। এবার অন্য এক মোহামেডান যেন মাঠে। আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয়া মোহামেডানকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয় আবাহনীকে।
বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয় মিনিটেই ব্যবধান কমানোর সুযোগ এসেছিল মোহামেডানের সামনে। উজবেক মিডফিল্ডার মুজাফফরজন মুজাফফরভের ফ্রি-কিক মানবদেয়ালে প্রতিহত হলে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন সুলেমান দিয়াবাতে। মোহামেডান অধিনায়কের শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান আবাহনীর এক খেলোয়াড়।
আক্রমণাত্মক ফুটবলে মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোলে মোহামেডানকে সমতায় ফেরান দিয়াবাতে। ৫৬ মিনিটে বক্স বরাবর কামরুল ইসলামের শটে বল বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন রহমত মিয়া। ফাঁকায় বল পান দিয়াবাতে। তার প্লেসিং শট আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলকে ফাঁকি দিয়ে জড়ায় জালে।
প্রথম গোলের চার মিনিট পর আবারও সুলেমান জাদু। ৬০ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মুজাফফরভের শট ফিস্ট করে ফেরান আবাহনী গোলরক্ষক সোহেল। তার ফিস্টে বক্সের বাঁ প্রান্তে বল পান জাফর ইকবাল। জাফরের শট থেকে লাফিয়ে হেডে বল জালে জড়িয়ে মোহামেডান সমর্থকদের উল্লাসে ভাসান দিয়াবাতে।
সমতা ফিরতেই জমে ওঠে ম্যাচ। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আবাহনীর আক্রমণও। ৬৫ মিনিটে এমেকা ওগবাহর হেডে বল ফেরে ক্রসবারে লেগে। পরের মিনিটেই গোল করে সেই আক্ষেপ মেটান আবাহনীর নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড।
ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের শট ঝাঁপিয়ে ফিস্ট করেছিলেন মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন হোসেন। সুযোগের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ওগবাহ। সুজনের গ্লাভসে লেগে ফিরে আসা বলে আলতো টোকায় বল জড়ান জালে।
৮৩ মিনিটে আবারো আবাহনীর জন্য বিপদ হয়ে ওঠেন দিয়াবাতে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর রক্ষণভাগ ভেঙে তুলে নেন হ্যাটট্রিক। কামরুল ইসলামের কর্নার থেকে দিয়াবাতের হেড দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না আবাহনী গোলরক্ষকের। ফেডারেশন কাপের ৪৩ বছরের ইতিহাসে ফাইনালে এটিই প্রথম হ্যাটট্রিক।
অতিরিক্ত সময়ে প্রথম গোলে শট নেয় মোহামেডান। মুজাফফরভের পাস থেকে নেয়া এমানুয়েল সানডের শট ঝাঁপিয়ে পড়ে তালুবন্দি করেন আবাহনীর গোলরক্ষক শহীদুল আলম।
ম্যাচের ৯৫ মিনিটে রাফায়েল আগুস্তোর শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন হোসেন। পরের মিনিটেই কলিনদ্রেসের কর্নার থেকে বাবলুর হেড ফিরিয়ে দেন সুজন।
ম্যাচের ১০৫ মিনিটে পেনাল্টি পায় মোহামেডান। স্পটকিক থেকে দলকে এগিয়ে দেন দিয়াবাতে। এমন পরিস্থিতিতে মোহামেডান যখন নিশ্চিত জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই আবাহনীর দেয়াল। ম্যাচের ১১৮তম মিনিটে রহমতের গোলে সমতায় ফেরে আকাশি-নীলরা।
বক্সের বাইরে থেকে রহমতের শট ঝাঁপিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি বদলি গোলরক্ষক বিপু। তার হাতে লেগে বল জালে জড়ালে খেলায় ৪-৪ গোলের সমতা আসে। শেষ পর্যন্ত খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
প্রসঙ্গত, ১৪ বছর আগের ফেডারেশন কাপে আবাহনী-মোহামেডান ফাইনাল ম্যাচটিও গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। সেখানেও শিরোপা উঠেছিল মোহামেডানের ঘরে। ১৪ বছর পরও ঘটল একই ঘটনা।
টাইব্রেকারে মোহামেডানের সুলেমানে দিয়াবাতে, আলমগীর কবির রানা, রজার দুরাতে দি অলিভিয়েরা, কামরুল ইসলাম পান জালের দেখা। মিস করেন শাহরিয়ান ইমন।
আবাহনীর প্রথম শট নিতে এসে হতাশ করেন অধিনায়ক রাফায়েল আগুস্তো দি সিলভা। এই ব্রাজিলিয়ানের দুর্বল শট ঝাঁপিয়ে আটকান বদলি গোলরক্ষক আহসান হাবিব বিপু। দেনিয়েল কলিনদ্রেস সোলেরাও পারেননি লক্ষ্যভেদ করতে। জালের দেখা পান কেবল এমেকা ওগবাহ ও মোহাম্মদ ইউসুফ।
যুগধারা ডট টিভি/অন্তু